সান নিউজ ডেস্ক: বর্তমান পৃথিবীতে চলছে অস্ত্রে ঝনঝনানি। কত রকমের অস্ত্র, বন্দুক থেকে শুরু করে গোলা-গুলি, কামান, রকেট, পরমাণু বোমা। কী নেই পৃথিবীর মানুষের অস্ত্র ভাণ্ডারে। আবার প্রত্যেকটি অস্ত্রেরই রয়েছে নানান রকমফের।
বন্দুকেরই তো কত রকম ভাগ, মেশিনগান, লাইট মেশিগান, স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান, রাইফেল, রিভলবার। কিন্তু যদি প্রশ্ন ওঠে মানুষ কবে প্রথম অস্ত্রের ব্যবহার শিখেছিল, তাহলে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদরা নানা রকম ধারণা দিয়েছেন মাত্র।
আদিম মানুষ প্রথমে গাছের ডাল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। পরে প্রস্তর যুগে তারা পাথর দিয়ে তৈরি অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। এরপর আগুন আবিষ্কারের পর তারা ধীরে ধীরে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বর্তমানের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করেছে।
সম্প্রতি সাহারা মরুভুমির একটি পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া সোনার খনি থেকে কিছু প্রাচীন অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। গবেষকরা পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন যে এই অস্ত্রগুলো লক্ষাধিক বছর আগে আফ্রিকার মানুষেরা ব্যবহার করত।
মধ্যপ্রাচ্যের সুদানের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত আটবারা শহর। সেখান থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত সোনার খনিতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এমন কিছু অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করেছেন যেগুলির আনুমানিক বয়স প্রায় ৭ লক্ষ বছর। তাদের ধারণা হোমো ইরেকটাস প্রজাতির প্রাচীন মানুষেরা এই অস্ত্রগুলি ব্যবহার করত।
জানা যায় কয়েক বছর আগে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আটাবার পূর্ব মরুভূমিতে খনন কার্য শুরু করেন। আটাবার মরভূমির একটি অঞ্চল বিখ্যাত সোনার খনির কারণে। এখানকার বহু মানুষই সোনার লোভে গর্ত খোঁড়েন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেখানেই নিজেদের খননকার্য শুরু করেন।
এরপরই একটি পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া সোনার খনিতে ওই অস্ত্রগুলো খুঁজে পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। উদ্ধার হওয়া এই অস্ত্রশস্ত্রগুলির মধ্যে বেশকিছু অস্ত্রকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে গবেষকদের। এই বিশেষ অস্ত্রগুলির ওজন যথেষ্ট ভারি এবং আকৃতিগতভাবে সেগুলো দেখতে অনেকটাই আমন্ড বাদামের মতো।
এই অস্ত্রগুলোর এক ধার ছেচে দেওয়া এবং এদের মাথাগুলোও যথেষ্ট ছুঁচলো। সাধারণত স্পিয়ারহেড হিসেবে ব্যবহৃত হত এই ধরণের অস্ত্রগুলি। আদিম মানুষেরা এগুলিকে লাঠির ডগায় বেঁধে বল্লম বা ওই জাতীয় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়াও অন্যান্য অস্ত্রগুলির মধ্যে পাওয়া গিয়েছে হ্যান্ড অ্যাক্সও।
ওই অঞ্চলের মাটির নিচে কী কী ধরণের জিনিস চাপা পড়ে আছে তা জানতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা অপ্টিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতিতে জানা গিয়েছে যে সুদানের ওই অঞ্চলের মাটির স্তর এবং স্থাপত্য প্রায় ৩ লক্ষ ৯০ হাজার বছরের পুরনো!।
এই কাজে গবেষকদলটির নেতৃত্ব দেওয়া পোলান্ডের গবেষক এবং ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজি অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ রোক্লোর (Institute of Archaeology of the University of Wrocław) প্রফেসর মিরোস্লো মাসেজ (Mirosław Masojć) বলেন যে, মাটির উপরের স্তরের নিচে যে অন্যান্য স্তর রয়েছে তার বয়স আরও বেশি।ওই অস্ত্রগুলি কী ভাবে ব্যবহার করা হত তার উপরই নির্ভর করবে এই স্তরগুলির বয়স।
তিনি আরও বলেন যে এই মরুভূমি অঞ্চল থেকে আরও যে যে অস্ত্রগুলি পাওয়া গিয়েছে, তারা অনুমান করছেন যে সেগুলি ব্যবহার করতেন হোমো ইরেকটাসরা। আজ থেকে প্রায় দু লক্ষ বছর আগে এই হোমো ইরেকটাসদের উদ্ভব ঘটেছিল। হোমো ইরেকটাসরা প্রথম দিকে আফ্রিকায় থাকলেও পরবর্তীকালে এরা ক্রান্তিয় অঞ্চল এবং ইউরোপ ও এশিয়া ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সান নিউজ/এমএম