সান নিউজ ডেস্ক: মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। গ্রহ ও উপগ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে—এই মতবাদকে গ্যালিলিও ভুল প্রমাণ করেন।
তার মতে, পৃথিবী নয়, সূর্যকে কেন্দ্র করেই সব কিছু ঘুরছে। কিন্তু এ ধারণা বাইবেলের বিরুদ্ধে যায় বলে সেদিন খ্রিষ্টীয় ধর্মগুরুরা তা মানতে চাননি৷ গ্যালিলিও তার বিশ্বাস থেকে একটুও টলেননি। তার জন্য শাস্তিও পেতে হয়েছে তাকে। ১৬১২ সালে তিনি ‘ডিসকোর্স অন বডিস ইন ওয়াটার’ প্রকাশ করেন।
পরের বছরই ‘লেটারস অব সানস্পট’ বইয়ে তিনি দাবি করেন সূর্য নিখুঁত নয়, বরং এর গায়ে কালো দাগ আছে, যাকে তিনি সৌরকলঙ্ক বলে অভিহিত করেন।
১৬১৩ সালে তিনি তার এক ছাত্রের নিকট একটি চিঠি লিখেন। যেখানে তার একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘ঈশ্বর আমাদের অনুভূতি, যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু আমাদের সেগুলোর ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, এমন কথা আমি মানি না।’
১৬৩২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই ‘ডায়ালগ’ প্রকাশ করেন। বইটি ছিল তিনজন ব্যক্তির কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে। যেখানে একজন ব্যক্তি কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বকে সমর্থন করে কথা বলছিল, অন্যজন সে যুক্তি খন্ডন করার চেষ্টা করছিল। তৃতীয় ব্যক্তি ছিল নিরপেক্ষ। বইটি প্রকাশের সাথে সাথে চার্চ এর প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং গ্যালিলিওকে রোমে ডেকে পাঠায়।
১৬৩৩ সালের জুলাই ২২ তারিখ থেকে গ্যালিলিওর বিচার শুরু হয়। পরে গ্যালিলিওকে জেলে যেতে হয়নি। জেরায় গ্যালিলিও প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাকে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়ে স্বীকার করানো হয় যে, তিনি ডায়ালগে কোপারনিকাসের তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন। তাকে ধর্মবিরোধীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। পরে গৃহবন্দী করা হয় এবং দু’টি আদেশ দেয়া হয়-
ক) বাইরের কোনো মানুষের সাথে দেখা করতে পারবেন না,
খ) ইতালীর বাইরে তার কোনো গবেষণা কাজ প্রকাশ করা যাবে না।
কিন্তু তিনি তার একটিও পালন করেননি।
গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তার ডায়লগের একটি কপি হল্যান্ডে ১৬৩৪ সালে প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি গতিবিজ্ঞানের ওপর তার সারাজীবনের কাজ নিয়ে ‘টু নিউ সায়েন্সেস’ বইটি লেখেন, যা হল্যান্ড থেকে ১৬৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। ততদিনে গ্যালিলিও অন্ধ এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনের অন্তিমকালে চলে এসেছেন।
সম্প্রতি ঘটনার দীর্ঘ চারশ বছর পর সেই গ্যালিলিওকে ভ্যাটিকান সিটি সম্মান জানিয়েছে। ইতালির রোমে আমেরিকান অ্যাকাডেমিতে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ প্রদর্শনীর৷ ঠিক সেই জায়গাটিতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় যেখানে ৪০০ বছর আগে গ্যালিলিও তার উদ্ভাবিত টেলিস্কোপটি সবাইকে দেখান।
ইতালিতে ১৫৬৪ সালে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানী গ্যালিলিও কেবল জোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন গণিতবিদ, পদার্থবিদ ও দার্শনিক৷ ১৬৪২ সালে মারা যান তিনি৷ আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের এই জনককে নিয়ে স্টিফেন হকিং এর মন্তব্য, ‘আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মদানের জন্য অন্য যে কারোর চেয়ে গ্যালিলিওর অবদান বেশি৷’
সান নিউজ/এমএম