ফিচার ডেস্ক: বৃটিশদেরকে পৃথিবীর সবথেকে সভ্য জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সভ্যতা সংস্কৃতি সকল ক্ষেত্রেই ইংরেজরা অন্যান্য জাতি থেকে এগিয়ে ছিল। তাছাড়াও বিশ্বব্যাপী কলোনি প্রতিষ্ঠা ও শাসনের মাধ্যমে তারা সভ্য জাতিতে পরিনত কর।
প্রায় ১ হাজার বছর পূর্ব থেকেই বৃটেনকে সভ্য জাতি বলা হত। কিন্তু ২০ শতক পর্যন্ত বৃটেনে এমন এক প্রথা প্রচলিত ছিল যা শুনে যেকোনো মানুষই অবাক হবে। এই প্রথা হল স্ত্রী বিক্রয় প্রথা। প্রায় ২০ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যতম সভ্য জাতির পুরুষরা তাদের নারী সঙ্গী অর্থাৎ স্ত্রীদেরকে মার্কেটে দাম হাকিয়ে বিক্রি করত। কিন্তু কেন এমন প্রথা? কেনই বা বৃটিশরা তাদের স্ত্রীদের বিক্রি করত? আর কেনই বা এসকল কর্মকাণ্ড আইনের আওতায় আসেনি?
বৃটেনে স্ত্রী বিক্রির প্রথা শুরু সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে মধ্যযুগে। পূর্বে পশ্চিমা বিশ্বের সমাজব্যবস্থা বর্তমানের মত মুক্তমনা ছিলনা বরং অনেক দেশই ছিল কট্টরপন্থী। এই কট্টরপন্থী প্রথার মধ্যে ছিল বৃটেনের বিবাহ প্রথা। ১৯ শতক পর্যন্ত কোন বৃটিশ নাগরিক চাইলেই ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারত না৷ বৃটেনের আইনে এমন কোন কিছুর উল্লেখ ছিল না। খুব দুষ্কর পরিস্থিতিতে হয়তো কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করা হত।
কিন্তু তার কিছু কঠিন শর্ত ছিল।এই উপায়ে ডিভোর্স নেয়ার জন্য স্ত্রী তার স্বামীকে শারিরীক ভাবে অক্ষম প্রমান করতে হত। একমাত্র তখনই ঐ জুটি ডিভোর্স পেত। আর এই শর্ত পূরণের জন্য কোর্টের প্রতিনিধিদের সামনে ঐ জুটির শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হত।
তখন একমাত্র কোর্টের প্রতিনিধিদের মনে হলেই ওই জুটি ডিভোর্স পেত। এই পন্থা ছিল হাস্যকর এবং লজ্জাজনক। তাই অনেকেই বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য অন্য পন্থা খুঁজতে শুরু করে।
১৩০২ সালে একজন অপেক্ষাকৃত কম উন্নত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচলিত এক প্রথার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ এর নতুন প্রথা শুরু করেন। তা হলো স্ত্রীকে হাটে বিক্রি করা। তবে ওই ব্যাক্তির নাম জানা যায়নি। এরপরে প্রায় ৩ শত বছর বৃটেনে এমন কোন ঘটনার প্রমান পাওয়া যায়নি। তবে ১৬৯২ সালে জন হোয়াইট হাউজ নামক এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে তাকে বিক্রি করে।
তবে জনের শাস্তি হয়েছিল এবং তার স্ত্রীকে যে পরিমান অর্থে বিক্রি করে তার অর্ধেক তার স্ত্রীকে দিতে হয়। এরপর থেকেই সাধারণ জনগণ বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রী বিক্রি করা শুরু করে। স্বামীরা মার্কেটে তার স্ত্রীদের গুণাবলী বলে প্রচার করত। এভাবে ক্রেতা জোগাড় হলে নিলামের মাধ্যমে স্ত্রীকে বিক্রি করত।
স্ত্রীকে বিক্রি করার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ খুব শিগগিরই জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু এটি আইনত অপরাধ ছিল। তবে বৃটেনের এলিট ক্লাসও বিবাহবিচ্ছেদ এর উপায় খুঁজতে থাক। তাই ১৭৫৩ সালে বৃটেনের নতুন বিবাহ আইন চালু হয়। যে আইনে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক হয়। কিন্তু সাধারণ জনগণ এই আইনকে অতটা আমলে নেয় না।
ফলে রেজিষ্ট্রেশন এর ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে মানুষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহের বদলে দু’জন একমত হলে তারা নিজেদের বিবাহিত বলে গন্য করত। এই কারণে বউ বিক্রির প্রথা আরো প্রবল হয়। তখন শুধুমাত্র বিচ্ছেদ নয় বরং টাকার জন্যও বউ বিক্রি করতেন স্বামীরা।
প্রশাসন ও এই ঘৃণ্য প্রথার দিকে তেমন নজর দেয়নি। ফলে স্ত্রী বিক্রির প্রথা আরো প্রবল হতে শুরু করে। এমনকি স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে লোহার চেইনে করে বেধে এনে হাটে দরদাম করে বিক্রি করত। এছাড়াও এই প্রথায় অনেক নারীই ভয়ংকর অত্যাচারের শিকার হতে থাকে।
অবশেষে স্ত্রী বিক্রির মত ঘৃণ্য প্রথা ঠেকাতে বৃটেনের আইনের সংসোধন করা হয়। ১৮৫৭ সালের ম্যাট্রিমোনিয়াল এক্টে বৃটেনে ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের আইন যুক্ত হয়। ফলে কোন ঝামেলা ছাড়াই বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব হয়।
এছাড়াও স্ত্রীরা স্বামীদের অত্যাচার থেকে বাচার জন্যও ডিভোর্স নিতে পারত। এই আইন পাশের পরে আর স্ত্রী বিক্রির কোন ঘটনা সম্পর্কে শোনা যায়নি।
সাননিউজ/এএসএম