নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলা নববর্ষ বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল শালু মোড়ানো হালখাতা। নতুন বঙ্গাব্দকে কেন্দ্র করে প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই বেচা-বিক্রির বাড়তি চাপ তো থাকেই। এর বাইরেও থাকে পুরনো বছরের সব হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন বছর শুরু করার তাড়া। আর তা করতে গিয়েই পুরনো খাতার হিসাব ওঠে নতুন খাতায়, যেই খাতাটিই কি না ‘হালখাতা’ বললেই একনামে চেনে সবাই।
‘হালখাতা’র ইতিহাস অনেক পুরনো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই হালখাতার আয়োজনেও এসেছে ভিন্নতা। আর সময়ের ধারাবাহিকতায় আর প্রযুক্তির ভিড়ে এর জৌলুস কিছুটা হারালেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর লকডাউনের জেরে এবার পুরোপুরিই হারিয়ে গেল সেই লাল খাতার আবেদন।
এবারে ব্যবসায়ীদের জীবনের খেরোখাতায় হালখাতা ব্যাপারটা নেই । এই করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহাদুর্যোগে স্রেফ বাঁচার লড়াই করছে সবাই। যেখানে রাস্তা থাকত বহু মানুষের কলতানে ভরপুর সেই রাস্তায় চলছে পিনপতন নীরবতা। অভিজাত বিপণি-বিতান, শপিং-মল থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত বেচাকেনা বন্ধ। প্রায় সর্বত্রই ফাঁকা খাঁ খাঁ করছে। দেশব্যাপী বন্ধের জেরে এবার বদলে গেছে হালখাতার রঙ। এই বিপর্যয় শুধু নববর্ষের আনন্দই ম্লান করেনি; লাল রঙকে ফিকে করে দিয়েছে করোনাভাইরাস।
এ বছর যেন সবকিছুতে বিরতি। সব কর্মব্যস্ততার যেন অবসান ঘটিয়েছে এক করোনাভাইরাস। পুরনো বছরের হিসাব মিলিয়ে নতুন বছরের হিসাব শুরু করার জন্য খোলা নেই কোনও দোকান। হালখাতা খোলার মতো বাস্তবতাই নেই।
বছরের পর বছর ধরে এই যে হালখাতা, নতুন বছর বরণ করে নেয়ার রীতি, এ বছরে এসে ছেদ পড়লো সেই ধারাবাহিকতায়। এতে করে ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের এই সময়টি ব্যবসার জন্য অন্যতম সময়, তেমনি হিসাব-নিকাশ, পাওনা আদায়েরও বিশেষ সময় এই বৈশাখ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
হালখাতা দূরে থাক, দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে ঘর থেকে কবে বের হওয়ার যাবে সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না। এভাবে দীর্ঘদিন যদি ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে তো ঋণগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।
করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা দিয়েছে তাতে করে ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরা আদৌ তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
একদিন করোনা ঝড় শেষ হবে; সেদিন সব স্বাভাবিক হবে; আবার হয়তো বাঙালি হালখাতার গন্ধ নেবো। আবার লাল শালুর কাপড়ে মোড়ানো হালখাতার সাদা পৃষ্ঠাগুলো ভরে উঠবে কালো কালিতে।