সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২৬ মার্চ এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রজতজয়ন্তী ২২মার্চ। এই দুই শুভলগ্ন উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজন করেছে মাসব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা।
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয়ের উপর আলোকপাত, ‘মুক্তির জয়গান’ শীর্ষক দেশের বিভিন্ন ব্যান্ডদলের গান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষের বিশেষ আয়োজন’, জাদুঘরের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আলপনা অঙ্কন-আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ২৫ মার্চ কালরাত্রি স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন, মিরপুরের জল্লাদখানা স্মৃতিপীঠে স্বাধীনতা উৎসব এবং স্বাধীনতা দিবসের দিন ‘শোক থেকে শক্তি’ শীর্ষক অদম্য পদযাত্রা’সহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানমালা।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ১৪ মার্চ থেকে শুরু হবে তিন দিনের ‘মুক্তির জয়গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যের এই আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করবে দেশের প্রতিষ্ঠিত ১৫টি ব্যান্ডদল। দলগুলো হলো- মাকসুদ ও ঢাকা, ওয়ারফেজ, অবস্কিউর, নোভা, জলের গান, নেমেসিস, আর্ক, এ্যাশেশ, বেঙ্গল বয়েজ, স্পন্দন, বাংলা ফাইভ, সহজিয়া, শহরতলী, সিন ও মেঘদল। ১৪ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ৯টায় জাদুঘরের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/liberationwarmuseum.official) সরাসরি উপভোগ করা যাবে এই আয়োজন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ‘ মুজিববর্ষ’ শীর্ষক বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিশু-কিশোরদের আনন্দদানের জন্য বিশেষ আনন্দ আয়োজন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে- ইউসেফ স্কুল, কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সালেহা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হযরত শাহ আলী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর ও এসওএস শিশু পল্লী।
২২মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তার ঠিক আগের ২১ মার্চ রাতে জাদুঘরের সম্মুখস্থ রাস্তায় করা হবে আলাপনা অঙ্কন। এতে অংশ নেবে ইউনিভার্সিটি অব ডেভলভমেন্ট অল্টার্নেটিভ (ইউডিএ)-এর চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এবং ২২ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২৫ বছর পূর্ণের দিন সন্ধ্যা ৭টায় জাদুঘর মিলনায়তনে ও ভার্চুয়াল মিডিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠান। এতে বক্তব্য রাখবেন জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী ও সংস্কৃতিকজন আসাদুজ্জামান নূর, বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করবেন ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব সারা যাকের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মারক বক্তব্য প্রদান করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী। আর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুক্লা সরকারের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র এবং সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
২৫ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত হবে কালরাত্রি স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালনের আয়োজন। জাদুঘরের শিখা চিরঅম্লানকে ঘিরে জাদুঘরের কর্মী, সুহৃদ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
২৫ ও ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিচালিত মিরপুর দশ নম্বর সেক্টরের জুটপট্টিতে অবস্থিত একাত্তরের গণহত্যার জ্বলন্ত সাক্ষী জল্লাদখানা স্মৃতিপীঠে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে ‘জল্লাদখানা স্মৃতিপীঠে স্বাধীনতা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি মিরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও শিশু-কিশোর সংগঠন অংশগ্রহণে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে।
২৬ মার্চ সকাল সকাল ৬টায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে শুরু হবে ‘শোক থেকে শক্তি অদম্য পদযাত্রা’র আয়োজন। পদযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনা প্রদক্ষিণ করে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শেষ হবে। ২০১৬ সালের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’র যৌথ আয়োজনের এবারের এই পদযাত্রায় পর্বতারোহী, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক -শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন।
এ উপলক্ষে শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে অনুষ্ঠিতএক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই সংবাদ সম্মেলন। এতে লিখিত বক্তব্যে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব সারা যাকের। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা ব্যান্ড দলের প্রতিষ্ঠাতা সঙ্গীতশিল্পী মাকসুদ, জাদুঘরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’র পরিচালক জাকারিয়া বেগ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, মাসব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালায় নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নানা বিষয় তুলে ধরার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সঙ্গে একটা নিবিড় যোগসূত্র তৈরি করার লক্ষে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়ে আরও সমৃদ্ধ হবে।
সান নিউজ/এইচএস/এসএস