লাইফস্টাইল ডেস্ক: অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, বেকারি পণ্য এবং মিষ্টি দুগ্ধজাত পণ্য চিনির প্রধান উৎস। এছাড়াও অতি জনপ্রিয় টমেটো কেচাপ বা সসেও রয়েছে চিনি। আপনি জানেন কি অতিরিক্ত চিনি খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক-
আরও পড়ুন: বসন্তে নিজের যত্ন
মস্তিষ্ককে ডোপামিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি
চিনি মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। ডোপামিন মানুষের আনন্দের অনুভূতির জোগান দেয়। একটি আপেল বা গাজর খেলে যে পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরণ হয় তার চেয়ে বেশি হয় একটি চকলেট বা চিনিযুক্ত স্ন্যাকসে। তাই আমরা এসবের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ি। ফল এবং শাকসবজি স্বাস্থ্যকর হলেও চকলেট বা চিনিযুক্ত স্ন্যাকসের মতো মস্তিষ্ককে ততটা ডোপামিন নিঃসরণ করে না, ফলে মস্তিষ্ক একই আনন্দের অনুভূতি পেতে বারবার বেশি বেশি চিনি খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে।
মেজাজ খিটখিটে করে দিতে পারে
ক্যান্ডি, বিস্কুট বা মিষ্টিযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় যা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। চিনি শোষণ করা শেষ করে কোষগুলো কিছুটা নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে, তখন মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্ত এবং উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারে। গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত চিনি সেবন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন: হাড়কে মজবুত রাখে যেসব খাবার
দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত করে
চিনিযুক্ত খাবার দাঁতের ক্ষতি সাধন করে। চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণের পরে সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে হয়। নচেৎ মুখে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়, যা দাঁত ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
জয়েন্ট ব্যথা হতে পারে
জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করলে ক্যান্ডি বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার শরীরে প্রদাহের কারণ হতে পারে। যা জয়েন্টের ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় বলছে, অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি খাওয়া বা পান করা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে।
ত্বকে পড়ে যেতে পারে বলিরেখা
অতিরিক্ত চিনি রক্তের প্রবাহে প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত করে এবং উন্নত গ্লাইকেশন নামক ক্ষতিকারক অণু তৈরি করে। এই অণুগুলো ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে দেয়। এগুলো ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের ক্ষতি করে ব্যাপকভাবে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
লিভারের ক্ষতিসাধন
চিনিতে থাকা ফ্রুক্টোজ বা উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ লিভারের ক্ষতি করতে পারে। লিভারে ফ্রুক্টোজ ভেঙে তা ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। যা পরবর্তিতে ফ্যাটি লিভারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
অত্যধিক মাত্রায় চিনি গ্রহণ রক্তপ্রবাহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়। যা ধমনীকে প্রভাবিত করে। যা হৃদযন্ত্রকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে হৃদযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে, যেমন হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক।
অগ্ন্যাশয় ক্ষতিগ্রস্ত করে
খাবার খাওয়ার সময় অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন পাম্প করে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে শরীর ইনসুলিনের সঠিকভাবে সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন অগ্ন্যাশয় আরও বেশি ইনসুলিন বের করতে শুরু করে। ফলে অতিরিক্ত কাজ করা অগ্ন্যাশয় ভেঙে যায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরও পড়ুন: নখের যত্নে করণীয়
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত চিনি কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। রক্তকে ফিল্টার করতে কিডনির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। রক্তে শর্করার মাত্রা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছে গেলে, কিডনি প্রস্রাবে অতিরিক্ত চিনি ছেড়ে দিতে শুরু করে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। ফলে রক্তে বর্জ্য ফিল্টার বাধাগ্রস্ত হয়। এবং কিডনি ফেইলিওর দেখা দেয়।
ওজন বৃদ্ধি
গবেষকদের মতে, চিনি-মিষ্টিযুক্ত খাবার বা কোমল পানীয় ওজন বৃদ্ধি করে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি চর্বি কোষগুলোকে স্ফীত করে এবং যেসব রাসায়নিক ওজন বৃদ্ধি করে, সেসব রাসায়নিক নির্গত করে। ফলে, ওজন বৃদ্ধি পায়।
সান নিউজ/এস আর/এএন