লাইফস্টাইল ডেস্ক: ইতিবাচক চিন্তার রয়েছে নানান সুফল। গবেষণায় দেখা যায়, ইতিবাচক চিন্তার ধারক ও বাহকরা দ্রুত অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেন। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম।
আরও পড়ুন: করলার তেতো ভাব কমানোর উপায়
যদিও ইতিবাচক চিন্তা সব রোগের ওষুধ নয়। তবুও আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গবেষণা বলে, যারা ইতিবাচক চিন্তা করে, তাদের কয়েকটি রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা হ্রাস পায়। যেমন-
>স্তন ক্যান্সার
>কলোরেক্টাল বা মলাশয়ের ক্যান্র্
>ইনফেকশন বা সংক্রমণ
>হৃদরোগ
>ফুসফুসের ক্যান্সার
>গর্ভাশয়ের ক্যান্সার
>শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ
>স্ট্রোক
আরও পড়ুন: ১৪ ফেব্রুয়ারি কেন ভালোবাসা দিবস?
গবেষকদের মতে, আশাবাদী মানুষেরা আশাহতদের চেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি সুস্থ থাকেন। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বেশি এবং বিষন্নতার মাত্রা কম।
ইতিবাচক চিন্তা করতে হলে সর্বপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে নেতিবাচক চিন্তা কোনগুলো! যা ইতিবাচক চিন্তা প্রতিস্থাপনে সহায়তা করবে। সময় সাপেক্ষ হলেও প্রক্রিয়াটি কার্যকর।
আরও পড়ুন: ত্বকের জন্য ভালো চা নাকি কফি?
কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনি শিখতে পারবেন কীভাবে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হয়। কৌশলগুলো জেনে নিন-
১. নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা ও ভাবা বন্ধ করুন
আমরা মনে মনে নিজের সাথে নিজে যেসব কথা বলি, সেটিই হলো ‘সেলফ টক’ বা নিজের সঙ্গে কথোপকথন। সেলফ টক মানুষের মনের ভেতরের একটি কণ্ঠ হিসেবে কাজ করে। যা আমাদের কীভাবে কাজ করা উচিত, কেমন আচরণ করা উচিত, কীভাবে চারপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, এসব বিশ্লেষণ করে। ‘সেলফ টক’ যদি শুধু নেতিবাচক হয়, তবে আত্মমর্যাদাও কমে যেতে পারে।
নেতিবাচক ‘সেলফ টক প্যাটার্ন’ মোকাবিলা করার উপায় কী? -এসব চিন্তা কখন আসে, তা খেয়াল রাখা। নিজে নিজে দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা করা। সময় নিয়ে আত্মসমালোচনামূলক চিন্তা করা ও নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা।
আরও পড়ুন: বসন্তে নিজের যত্ন
ইতিবাচক চিন্তা শুরুর প্রথম ধাপ হতে পারে ‘সেলফ টকের’ দিকে মনোযোগ দেওয়া। ‘নেগেটিভ সেলফ টকের’ প্রতি ঝোঁক বেশি হলে চিন্তার ধরন পরিবর্তন করুন। নিজের আচরণগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করুন এবং নেগেটিভিটি দূর করার উপায় খুঁজতে শুরু করুন।
২. নিজেকে হাসি-খুশি রাখুন
জীবনে কোনো হাসি-আনন্দ ছাড়া আশাবাদী থাকা খুব কঠিন। কঠিন কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সময়েও নিজেকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করা প্রয়োজন। হাসির নাটক, সিনেমা, বই, অনলাইনে হাসির গল্প, কৌতুক ইত্যাদি পড়া ও দেখা ইতিবাচক চিন্তার জন্য সহায়ক।
৩. আশার বীজ বপন করুন
ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখাকে আমরা অনেকটা মাংস পেশি মজবুত করার মতো মনে করতে পারি। যত বেশি চেষ্টা করবেন, ততই ইতিবাচক চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। গবেষকদের মতে, আপনার নিজের জীবনের কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার ধরনের সঙ্গে আপনি আশাবাদী নাকি নৈরাশ্যবাদী, তার সম্পর্ক রয়েছে। আশাবাদীরা ঘটনাটির ভালো দিকগুলো বেশি বেশি করে তুলে ধরেন। তাদের জীবনে ভালো কিছু অর্জিত হলে তার কৃতিত্ব দেন নিজের চেষ্টা এবং দক্ষতাকে। কিন্তু নৈরাশ্যবাদীরা নিজেদের বাদে বাকি সবাইকে কৃতিত্ব দেন।
আরও পড়ুন: মিষ্টি আলুর উপকারিতা
আশাবাদীরা জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মেনে নেন এবং বিশ্বাস করেন, যা ঘটেছে তার ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অন্যদিকে নৈরাশ্যবাদীরা দুর্ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেন। সবকিছুর দোষ নিজেদেরই কাঁধে তুলে নেন। জীবনের প্রতিটি ঘটনা নিয়ে একটু ভাবুন। নিজের অর্জনগুলোর জন্য প্রাপ্য কৃতিত্ব নিজেকে দিন। যেসব দুর্ঘটনার উপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, সেসবের জন্য নিজেকে দোষারোপ করবেন না।
৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে অভ্যাসে পরিণত করুন
ডায়েরি লিখতে পারেন। নোট করতে পারেন দৈনন্দিন আপনার সাথে ঘটা ঘটনা এবং কার কাছে আপনি কৃতজ্ঞ। গবেষণা বলছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও লিখে রাখার অভ্যাস ইতিবাচক চিন্তা বৃদ্ধি করতে পারে। যা সব মিলিয়ে সুস্থ থাকতেও সহায়তা করবে। অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা আর অনুভূতি মাথায় আসলে আনন্দ দেয় এমন কিছু ভাবুন এবং লিখে রাখুন। এসব আপনাকে আশাবাদী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
৫. দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা চালিয়ে যান
সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। ‘নেগেটিভ সেলফ টক’ কমান এবং মনে ইতিবাচকতার বীজ বপন করুন। প্রয়োজন হলে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের মানুষদের সাহায্য নিতে পারেন। একেবারেই ব্যর্থ হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
সান নিউজ/এসআর/এনজে