লাইফস্টাইল ডেস্ক: ১৫-১৯ বছর বয়সি কিশোরী গর্ভবতী হলে, একে বলা হয় টিনেজ প্রেগন্যান্সি। WHO-এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৫ বছরের নিচে প্রায় ১ মিলিয়ন কিশোরী প্রতিবছর বাচ্চা প্রসব করে।
আরও পড়ুন: মশাবাহিত ৭ রোগ থেকে সাবধান
অন্যদিকে UNICEF-এর মতে, তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ১ জন কিশোরী মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়। এ বয়সের কিশোরী শারীরিক ও মানসিকভাবে মাতৃত্বের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়।
যখন একজন কিশোরী মা হয় তখন এর প্রভাব শরীর, আবেগ, সামাজিক জীবনের ওপর পড়ে। এর ফল হিসাবে মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশু, অল্প ওজনের শিশু, যৌনরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: প্লাটিলেট বাড়াতে যা খাবেন
কারণ:
পরিসংখ্যান বলছে, ৯৫ শতাংশ কিশোরীর গর্ভধারণ স্বল্প-আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখা যায়। বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য, অপর্যাপ্ত শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের অভাব, লিঙ্গ বৈষম্য, গ্রামীণ বাসস্থান, গর্ভনিরোধক কম ব্যবহার করা এবং অপর্যাপ্ত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (SRH)-এগুলো কিশোরী গর্ভধারণের বড় কারণ।
এছাড়া উন্নত দেশের জন্য পর্নোগ্রাফি এবং বিবাহপূর্ব যৌন আচরণ কিশোরী গর্ভধারণের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন: খাওয়ার পরপরই চা খেলে কী ঘটে?
প্রতিকার:
কিশোরী গর্ভধারণ প্রতিরোধের জন্য প্রতিক্রিয়াশীল এবং সক্রিয় জৈব-সামাজিক কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা টিন প্রেগন্যান্সি প্রিভেনশন (টিপিপি) এ অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে বড় মাপের কৌশল। যেমন- টিপিপি জাতীয়ভাবে পালন বা মিডিয়া প্রচারণা, পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক, স্কুল, ক্লিনিক, চাকরি এবং বাড়ি ভিত্তিক শিক্ষা এবং পরিবারের জন্য বাড়িতে ব্যবহার করার জন্য ভিডিও বা লিখিত উপকরণ বিতরণ।
আরও পড়ুন: বর্ষায় সর্দি-কাশি দূর করতে ৫ পানীয়
বিয়ের আগে চাপ ব্যবস্থাপনা (MPM) হলো আরেকটি যৌন শিক্ষা, যা পিতা-মাতা ও সন্তানদের জন্য ঘরোয়া সমাধান। কিছু স্বতন্ত্র অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা যেমন- পিতা-মাতার সন্তানদের সাথে কন্ডম ব্যবহারের কারণ ও উপকার সংক্রান্ত আলোচনা ভালো ফলাফল দেয়।
এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, এ উদ্যোগ পারিবারিক কার্যকারিতা উন্নত করে এবং অনিরাপদ যৌনতার ঘটনা হ্রাসে ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর লক্ষণ ও আক্রান্ত হলে করণীয়
এছাড়া কিশোরী গর্ভধারণ এবং এসটিআই প্রতিরোধের জন্য যৌনাচার বর্জন শিক্ষা কার্যক্রম সবচেয়ে কার্যকরী এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নকারী উপায়। যৌন শিক্ষার একটি ব্যাপক উদ্যোগ হলো, আজকের কিশোর-কিশোরীদের জ্ঞান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা অর্জন। এটি তাদের যৌন জীবনের সাথে জড়িত বিষয় সম্পর্কে বাস্তব সম্মত ধারণা দেয়।
এ উদ্যোগটি যুবকদের যৌন বিরত থাকার বিষয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে তোলে। সেই সাথে তাদের সম্পর্কের সীমানা এবং চাপ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। পাশাপাশি তাদের গর্ভনিরোধক ব্যবহার এবং যৌন সংক্রামিত রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে অবহিত করে।
আরও পড়ুন: রেগে গেলে রোগের ঝুঁকি বাড়ে
কিশোরী গর্ভধারণ প্রতিরোধ একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সুস্থ জীবনের জন্য সমাজের প্রতিটি সদস্যের অংশগ্রহণের প্রয়োজন।
এটি প্রতিটি সমাজের জন্য একটি প্রধান মহামারি ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের সবারই জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগ সমাজে সক্রিয়ভাবে কিশোর গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে অবদান রাখে।
লেখক:
ডা. আফরোজা শারমীন
কনসালটেন্ট, ফ্যামিলি মেডিসিন, ইংল্যান্ড।
সান নিউজ/এনজে