লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রতিবছর গরম ও বর্ষার মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। সে কারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৫৭টি জেলায়। রোববার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে ডেঙ্গুতে ইতিমধ্যে ১২ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬৭ জন। তাই এ ব্যাপারে আমাদের আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিৎ।
আরও পড়ুন : বর্ষাকালে ‘ভিটামিন ডি’ পাওয়ার উপায়
ডেঙ্গু আক্রান্তের লক্ষণ
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। অন্য ভাইরাস জ্বরের মতো ডেঙ্গুজ্বর সাত দিনের বেশি থাকে না। প্রথমদিন থেকেই বেশি জ্বর নিয়েই রোগীরা আসে। একটানা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে ছয় দিনের দিন জ্বর চলে যেতে পারে। দু’দিন পর একদিন জ্বর না থেকে আবার দু’দিনের জ্বর থাকলে তারপর জ্বর চলে গেল তাও হতে পারে। অন্য ইনফেকশন না হলে, এক্সটেন্ডেড না হলে ডেঙ্গুজ্বর ছয় দিনের বেশি থাকে না।
জ্বরের সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় র্যাশ হতে পারে। তবে অনেক সময় জ্বর ছাড়া আর কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।
যা খাবেন
প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার পান করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন।
আরও পড়ুন : রেগে গেলে রোগের ঝুঁকি বাড়ে
গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ সেবন করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ভাগ
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে এ, বি ও সি।
প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর হয়। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী এ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
বি ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তার পেটে ব্যথা হতে পারে। বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা কিছুই মুখে নিতে পারবে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুই দিন জ্বরের পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
আরও পড়ুন : নারীর মন জয় করার সহজ উপায়
সি ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে লক্ষণ বিচার করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।
সতর্কতা
এডিস মশাবাহিত ভাইরাস রোগ হচ্ছে ডেঙ্গু। এডিস ইজিপ্টি মশা জঙ্গলে থাকে না। রাতে কামড়ায় না। গায়ে দাগকাটা মশাগুলো একবারে অনেককে কামড়াতে পারে। ম্যালেরিয়ার মশার মতো একজনের রক্ত খেয়েই পরে থাকে না।
এডিস মশা ঘরে, চৌকির নিচে, পর্দার ভাঁজে, বেসিনের নিচে লুকিয়ে থাকে। বংশবিস্তার করে পানিতে। ছোট পাত্রে ৫ দিনের কম জমে থাকা পানিতে। নর্দমায় নয়, ডোবায় দিনের পর দিন জমে থাকা ময়লা পানিতে নয়, নদী, সাগর, বিলের পরিষ্কার বহমান পানিতে নয়। এই মশা বংশবিস্তার করে ফুলের টবের নিচের জলকান্দার পানিতে, বৃষ্টির দিনে রাস্তার ধারে জমা পানি, নির্মাণসামগ্রীতে থাকা পানি, পেপসির ক্যান, নারিকেলের খোলায় জমা পানিতে।
আরও পড়ুন : বর্ষায় আচার ভালো রাখার উপায়
মশা মারতে স্প্রে করতে হবে ঘরের মধ্যে, টেবিলের নিচে, দরজার আড়ালে, পর্দার ভাঁজে, বেসিনের নিচে। সকালে দিনের কাজটা স্প্রে দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। কোনো চেম্বারে, কোচিং সেন্টারে বসে থাকতে ফুল হাতা কাপড়, মোজা পরে থাকুন, টেবিলের নিচে মোজা পরা পা রাখুন। ঘরে মশার ওষুধের মেশিন রাখুন। দিনের বেলায় মশারি দিয়ে ঘুমান।
সান নিউজ/জেএইচ