নৌশিন আহম্মেদ মনিরা: স্বামী স্ত্রী দু'জন একসাথে অফিস থেকে ফিরে আপনি যদি গলার টাই খুলতে খুলতে স্ত্রীকে বলেন, ‘এক গ্লাস পানি দাও’ তখন আপনার চেহারায় পানি ছুঁড়ে মারার ইচ্ছা আপনার স্ত্রীর হতেই পারে।
ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে অফিসে রেডি হতে থাকা বউটাকে যদি আপনি সকাল আটটায় হাই তুলতে তুলতে খেতে বসে বলেন, ‘রান্নায় লবণ কম হয়েছে’ তখন আপনার গরম ভাতের প্লেটে এক গ্লাস পানি ঢেলে ‘নে খা’ বলার ইচ্ছা আপনার স্ত্রীর হতেই পারে। বাবা হয়ে বাচ্চার কান্না থামানোর চেষ্টা না করে উল্টো বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে বকাঝকা করলে আপনার মত স্বামীকে ত্যাগের ইচ্ছা হতেই পারে আপনার স্ত্রীর।
বাহিরে চাকরি করে তাই সংসারে মন নেই অজুহাতটা নিতান্ত দায় সাড়া। একজন কর্মজীবী নারী তখনি সংসার ত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেন যখন তার উপর ঘরে বাইরে একই সমান দায়িত্ব পালনে চাপ আসে।
যদি স্ত্রী আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য স্বামীর সহযাত্রী হয়ও কিন্তু গৃহের পরিবেশ রক্ষায় স্বামীরা কেন জানি সহযাত্রী হতে চান না। অফিস থেকে ফিরে স্ত্রী ব্যস্ত হয় সংসারের কাজে আর স্বামী ব্যস্ত হয় খবরের কাগজে, ইউটিউবে কিংবা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইডে। তারা কমিলার মেয়ে জমিলার ভাসুরের খালাতো বোনের চাচাতো ভাইয়ের দূর সম্পর্কের এক বেয়াইয়ের আগুনে পুড়ে যাওয়ার সংবাদ শুনে আক্ষেপ করে কিন্তু নিজের বউটা ইতোমধ্যে ভাতের মাড় ছাঁকতে গিয়ে হাত পুঁড়িয়ে পেস্ট লাগিয়ে তরকারি নাড়াচাড়া করছে সেদিকে খেয়াল করার সময় তার একেবারেই হয় না।
আধুনিক পুরুষেরা চায় বউ চাকরি করুক। কিন্তু চাকরি করা বউটার উপর ফ্লোরে ধূলা কেন, রান্না দেরি হচ্ছে কেন, মাছের ঝোল রান্না করলা কেন, বিছানাটা ঝাট দেওনা কেন, কাপড়ে গন্ধ লাগে কেন, বাথরুমটা পিচ্ছিল কেন, অফিস থেকে এসে কি করলা ইত্যাদি সব অভিযোগ আনতে এতোটুকু লজ্জাও করেনা। তবুও রক্ষা নেই। বউটা যেই সমস্ত কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে বিছানার এক কোণে চুপটি করে শুয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে তখন পাশ থেকে রিলাক্স মুডে থাকা বরটা স্বামীর অধিকার নিয়ে টেনে তুলে বলে আসোনা। স্ত্রী আদৌ আগ্রহী কিনা সে নিয়ে ভাবার সময় নেই।
চাকরি করে সাপের পাঁচ পা দেখে মেয়েরা স্বামী ত্যাগের ইচ্ছা করেনা। এই ইচ্ছার পেছনে লুকিয়ে আছে অসহ্য সব যন্ত্রণা। ‘আর পারছি না’ বলে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায় স্বামী নামের কোন এক অত্যাচারীর হাত থেকে। তখনি মাথায় আসে, ‘কিসের সংসার? চাকরি করবো, খাবো, আরাম করবো, রিলাক্স একটা লাইফ। কথা শুনানোর কেউ নেই।’
সান নিউজ/এনএএম