সান নিউজ ডেস্ক: কাঁঠালের মতো পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল খেতে অপছন্দ করেন অনেকে। কিন্তু কাঁঠালের বীজ পছন্দ না করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এর পুষ্টিগুণ অনেক। শরীর সুস্থ রাখতে যেমন খাওয়া যায়, তেমন ত্বক আর চুলের যত্নেও একে কাজে লাগানো যেতে পারে।
সঠিক যত্নের অভাব, সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি, ঘাম, ধুলোবালি, খুশকি—এই সবকিছুর জন্য সাধারণত চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া চুল হারায় তার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। এমন সমস্যা থেকে সমাধান পেতে ব্যবহার করতে পারেন কাঁঠালের বীজ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, আয়রন। এই সব কটি উপাদান চুলের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
চুলের গোড়া মজবুতের জন্য প্রয়োজন হয় প্রোটিনের। কারণ, চুলের ফলিকল বেশির ভাগ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ফলিকলের ক্ষতির জন্য চুল পড়া বাড়ে।
ভিটামিন এ মাথার ত্বকের গ্রন্থিকে সিবাম নামে তৈলাক্ত পদার্থ তৈরির কাজে সাহায্য করে। সিবাম মাথার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। শরীরের কোষের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। সুস্থ–সুন্দর বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ কার্যকর। আর ভিটামিন এ–এর সঙ্গে কাজ করে আয়রন। কারণ, আয়রন মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে।
কাঁঠালের বীজে আরও আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি চুলের ফলিকলকে ফ্রি র্যাডিকেল নামের ক্ষতিকর অণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিকেল চুলকে খুব বাজেভাবে ড্যামেজ করতে পারে।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল মজবুত চুলের জন্য কাঁঠালের বীজের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। যা বানানো খুব সহজ। নতুন কাঁঠালের বীজ হলে প্রথমে পানিতে অন্তত এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কারণ, এটি কিছুটা অ্যাসিডিক। আর কয়েক দিনের পুরোনো বীজ হলে উপরের সাদা খোসা ফেলে দিতে হবে। এরপর দুধে ভিজিয়ে নরম করে নিন। নরম কাঁঠালের বীজ দুধসহ পেস্ট তৈরি করে মাথার ত্বকে খুব ভালোভাবে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে ৩০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মাস্ক সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহারে চুল পড়া কমে আসবে।
৩০ বছরের পর থেকে ত্বকে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা পড়ার প্রবণতা শুরু হয়। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত শুষ্কতা, সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি বা দূষণের প্রভাবে ত্রিশের আগেই অনেকের মুখে দেখা দেয় বলিরেখা। এ সময় ঠিকমতো যত্ন নিতে পারলে সমস্যাটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কাঁঠালের বীজকে কাজে লাগাতে পারেন। এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন এ সিবাম নিঃসৃত করে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। এভাবে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়।
কাঁঠালের বীজে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন ও ফেনোলিকসের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফেনোলিকস ত্বককে ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব থেকে নক্ষা করে। ফ্রি র্যাডিকেল ত্বকের সেল ড্যামেজ করে, ত্বককে বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেয়।
ফ্ল্যাভোনয়েডও একই কাজ করে। আর স্যাপোনিন খুব ভালো মানের প্রাকৃতিক ক্লিনজার। এটি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে।
বলিরেখা দূর করতে চাইলে বানিয়ে নিন কাঁঠালের বীজের অ্যান্টিরিংকেল মাস্ক। দুই টেবিল চামচ কাঁঠালের বীজের পেস্টের সঙ্গে এক টেবিল চামচ দুধ এবং দুই চামচ মধু মেশালেই তৈরি। মুখে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে ২০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ মাস্ক সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার বলিরেখা অনেকখানি কমে আসবে, আর সেই সঙ্গে ত্বক ফিরে পাবে তার হারানো উজ্জ্বলতা।
তথ্যসূত্র: স্টাইলক্রেজ, শি বিগান, হেলথলাইন
সান নিউজ/এমএম