লাইফস্টাইল ডেস্ক: বাংলাদেশে সপ্তাহ খানেক ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে তীব্র দাবদাহ। এর মধ্যে আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ২৬শে এপ্রিল ঢাকায় গত ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে।
ওইদিন রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এই তীব্র তাপমাত্রা চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত চলবে। কিন্তু এই প্রচণ্ড গরমে দেখা যায় শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সতর্ক না হলে সাধারণ পানিশূন্যতা, বদহজম থেকে হিটস্ট্রোকের মতো সমস্যায়ও পড়তে পারেন যে কেউ।
কিন্তু তীব্র গরমে সুস্থ থাকার কী উপায়?
গরমে সুস্থ থাকতে করণীয় সম্পর্কে জানতে বিবিসি বাংলা ঢাকার আহসানিয়া মিশন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক ডা. মাসুমা নাওয়ার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক খালেদা এদিবের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন
তাপ ব্যবস্থাপনা
মানবশরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে, কিন্তু তার জন্য সুদিং বা শীতল তাপমাত্রা হচ্ছে ২০ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
আর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মানবশরীরের সহ্যসীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে মানবশরীর সহ্য করতে পারে না। তখন নানারকম অস্বস্তি ও সমস্যা দেখা যায়। এমনকি তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মানুষের হিটস্ট্রোক হবার আশংকা বেড়ে যায়।ফলে যখন গরম বাড়ে তখন তাপ ব্যবস্থাপনাই হবে প্রধান কাজ, অর্থাৎ কিভাবে গরম কম লাগবে সেটি দেখতে হবে।
পানি এবং পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে
শরীরের পানিশূণ্যতা ঠেকাতে এ সময় প্রচুর পানি এবং পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। পানি, স্যালাইন, ফলের রস, সরবত, ডাব এ ধরণের পানীয় শরীরে আর্দ্রতা যোগায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পানিশূন্যতার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ পানিশূন্যতার ফলে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে।
পানি ও পানি-জাতীয় খাবারের পাশাপাশি পানি রয়েছে এমন প্রচুর সবজি ও ফল খাওয়া উচিত। তরমুজ, আনারস, জাম্বুরা, আপেল এমন ফল শরীরের গরমের ভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রচুর সবজি খেলে পরিপাকক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। তাতে শরীরের অস্বস্তি কমে।
সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে হবে। দিনের যে সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকে সে সময় সরাসরি রোদে না যাওয়া বা অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা।
ফলের জুস
পানিজাতীয় পানীয় শরীরে আর্দ্রতা যোগায়। বাংলাদেশে সাধারণত সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সূর্যের আলো সবচেয়ে প্রখর থাকে। সূর্যের আলোতে যেতে হলে ছাতা, টুপি, পায়ে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। চোখ নিরাপদ রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে পানি অবশ্যই নেবেন।
ভাজাপোড়া এবং জাঙ্ক ফুড বাদ
তীব্র গরমে ভাজাপোড়া মুখরোচক খাবার, কিংবা জাঙ্ক ফুড শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বার্গার, পটেটো চিপস বা পিৎজার মতো খাবারে প্রচুর ক্যালরি, সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে একদিকে যেমন গরম বেশি লাগে, তেমনি মুখে অরুচি এবং বদহজমের আশংকা তৈরি হয়। গরমে মুখরোচক ভাজাপোড়া খাবার কম খেতে হবে। ফলে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।সেই সঙ্গে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড়
বিশেষজ্ঞরা গরমে হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরার পরামর্শ দেন। এ ধরণের কাপড়ে তাপ শোষণ হয় দ্রুত এবং বাতাস আসাযাওয়া করতে পারে, ফলে গরম কম লাগে।
ঘর ঠাণ্ডা রাখা
ঘর যাতে ঠাণ্ডা থাকে এবং ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দিনের বেলায় ঘরে আলো কম থাকলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে।ঘরের মধ্যে গাছ থাকলে তা তাপ শুষে নেয়। পাকা মেঝে হলে বারবার ঘর মুছে দিলে ঘর ঠাণ্ডা থাকে।
যেসব অসুস্থতা হতে পারে
প্রচণ্ড গরমে সাধারণত অতিরিক্ত ঘামের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ে মানুষের শরীর। পানিশূন্যতার কারণে দ্রুত দুর্বল হয়ে যায় মানুষের শরীর। এছাড়া বদহজম ও পেট খারাপ এবং পানি-বাহিত নানা ধরণের রোগ বালাই হতে পারে এ সময়। করোনা ভাইরাস সহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত পাতলা পায়খানা হতে পারে। মাথা ঘোরা এবং বমিভাব, কারো ক্ষেত্রে বমিও হতে পারে। এধরণের অসুস্থতা সাধারণত একটু সতর্ক হলে এড়িয়ে চলা সম্ভব।
কিন্তু অতিরিক্ত গরমে যদি কারো শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঝিমঝিম-ভাব হয় কিংবা মাথা ঘুরে পড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাননিউজ/এএসএম