লিনা আকতার : শীতে বেশি আর্দ্রতার কারণে ত্বক দেখায় শুষ্ক, ফাটলযুক্ত, রুক্ষ, পুষ্টিহীন ও নিস্তেজ। তবে ত্বক সতেজ, নির্মল ও ময়েশ্চারাইজ করে তুলতে কিছু খাবারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। খাবার হলো :
পানি : শুকনো ত্বকের জন্য প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো পানি যা কোষকে সক্রিয় ও কার্যক্ষম রাখে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে চামড়া শুকনো ও রুক্ষ হওয়ার পাশাপাশি ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা। এ জন্য প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের কমপক্ষে দুই-তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।
তবে শারীরিক অসুস্থতা ও পরিশ্রম অনুযায়ী এর চাহিদা কমবেশি হতে পারে। শুধু পানি খেতে ভালো না লাগলে ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন। আকর্ষণ করার জন্য পানিতে কাটা ফল, মসলা, তুলসী পাতা, থাইপাতা দিয়ে খেতে পারেন।
শসা : শুকনো ত্বকের জন্য শসা একটি ভালো খাবার। মাঝারি আকারের একটি শসায় ২৮৭ গ্রাম পানি থাকে। এ ছাড়া রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, ফলেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম পটাসিয়াম, দস্তা, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ফাইবার ইত্যাদি।
এসব উপাদান ত্বককে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি পেশি ও হাড় ভালো রাখে। প্রতিদিন খেতে পারেন শসার সালাদ, শসার স্যান্ডউইচ, ডিটক্স পানি, শসার রস, স্যুপ ইত্যাদি।
কলা : কলায় রয়েছে ফাইবার বা আঁশ যা ত্বকের কোষকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেতে পারেন। কলার স্মুদি, প্যানকেক ইত্যাদি বানিয়েও খেতে পারেন। তবে যাদের কিডনি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ রয়েছে তারা কলা খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
সবুজ পাতাযুক্ত সবজি : পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগমের মতো সবজিতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, পটাসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, ফাইবার, দস্তা ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, যা ত্বককে শুষ্ক করতে ও চুলকানি থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন খেতে পারেন সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, স্মুদি, স্যুপ, সালাদ, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি।
গাজর : গাজরে থাকা ভিটামিন ‘সি কোলাজেন উৎপাদন করে। এর ভিটামিন ‘এ ‘ ত্বকের মৃত কোষকে বিকশিত করে ত্বক সুস্থ রাখে। গাজরের হালুয়া, স্যুপ ও তরকারি রস করে খাওয়া যেতে পারে।
টমেটো : এতে উচ্চমাত্রায় লাইকোপেন থাকে। এ ছাড়া থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিএজিং উপাদান, যা ত্বককে সতেজ ও ডিহাইড্রেট রাখে। খেতে পারেন টমেটোর তরকারি, স্যুপ, চাটনি, সস ইত্যাদি।
ডালিম : ডালিমের বীজে রয়েছে এ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের প্রদাহ, চুলকানি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ডালিমের রসে থাকা ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং খনিজ ত্বকের ফাটল নিরাময়ে কাজ করে।
মধু : মধু প্রাকৃতিক এ্যান্টিসেপ্টিক, যা ত্বকের রুক্ষভাব দূর করে ও ত্বককে করে মসৃণ ও উজ্জ্বল। তবে দু-এক চা চামচের বেশি খাবেন না। যাদের ডায়াবেটিস ও ওজন বেশি, তাঁরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। এ ছাড়া লেবু, আদা দিয়ে বানিয়েও খেতে পারেন মধু।
টিপস : ♦ তৈলাক্ত ভাজা খাবার ত্বকের জন্য ভালো নয়। তাই যতটা পারেন কম খান। ♦ চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। ♦ নিজেকে হাইড্রেট রাখুন। ♦ পর্যাপ্ত ঘুমান (৭-৮ ঘণ্টা)। ♦ বাইরের প্রসাধনীগুলো না কিনে ঘরে মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগান ।
♦ বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ♦ মানসিক চাপ কমান, টেনশন মুক্ত থাকুন । লিনা আকতার; পুষ্টিবিদ, ঠাকুরগাঁও ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল।
সান নিউজ/এসএ