লাইফস্টাইল ডেস্ক : ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সের মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয় সাধারণ সমস্যা হলো জরায়ু ক্যান্সার। আমাদের দেশে জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা খুবই কম। তাছাড়াও পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্টের পরিসর এখনো ক্ষুদ্র। তবে জরায়ু ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য রোগ।
কারণ নিয়মিত স্ক্রিনিং টেস্টগুলোর মাধ্যমে প্রাক-ম্যালিগন্যান্ট অর্থ্যাৎ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সহজেই সনাক্ত করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, জরায়ু ক্যান্সারের সচেতনতার জন্য স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপমহাদেশের মহিলারা অসচেতন।
টিকা ও স্ক্রিনিং চিকিৎসার মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও ২০৫০ সালের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখ কমিয়ে আনার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।
সাম্প্রতি ভারতীয় প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ নোইডার মাদারহুড হসপিটালের বিখ্যাত প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সন্দীপ চদ্দারের দেয়া পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ডাক্তার সন্দীপ চদ্দার বলেন, পেপ স্মিয়ার টেস্ট সম্পর্কে জানাটা মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রিনিং টেস্ট মূলত প্রাক ক্যান্সার এবং এন্ডোসরভিকাল ক্যান্সার প্রক্রিয়া সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকরা জরায়ুর কোষের পরিবর্তন অনুসন্ধানের জন্য স্প্যাটুলার মতো যন্ত্র ব্যবহার করে। পেপ স্মিয়ার টেস্ট ক্যান্সারের প্রাক-ম্যালিগন্যান্ট পর্যায়, হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি), প্রদাহ বা সংক্রমণের ফলে সেলুলার পরিবর্তনগুলো নির্ণয় করতে সহায়তা করে।
কোন বয়সে পেপ স্মিয়ার টেস্টের জন্য যাওয়া উচিত?
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কে্ন্দ্র (সিডিসি) পরামর্শ অনুসারে, ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মহিলাদের নিয়মিত পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট করা উচিত। তবে, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটস (এনআইএইচ) পরামর্শ দেয় যে, ২১ বছরের কম বয়সী মেয়েদের পেপ স্মিয়ার টেস্ট থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সাথে তারা আরও পরামর্শ দেয় যে, ৬৫ বছরের থেকে বেশি বয়সের মহিলাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ দেখা না দিলে পেপ স্মিয়ার টেস্ট করা উচিত নয়।
তবে মেনোপসাল এবং পোস্টমেনোপসাল উভয়ের পেপ বা এইচপিভি নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু যে সমস্ত মহিলারা হিস্ট্রিস্টোমি করেছেন এবং পেন টেস্টগুলোর পূর্ববর্তী ইতিহাস নেই তারা পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট বন্ধ করতে পারেন। পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট প্রাক-ক্যান্সার সনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পরীক্ষা। সময়মতো সনাক্ত করা গেলে জরায়ুর ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব।
বয়সের উপর ভিত্তি করে কতবার পেপ স্মিয়ার টেস্টের জন্য যাওয়া উচিত? ২১ থেকে ২৯ বছর: পেপ স্মিয়ার টেস্টের জন্য আদর্শ বয়স ২১ বছর। ফলাফল যদি নেতিবাচক হয় তবে পরবর্তী পরীক্ষাটি তিন বছরের ব্যবধানের করা উচিত।
৩০ থেকে ৬৫ বছর: এই বয়সে এসে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেপ স্মিয়ার এবং এইচপিভি পরীক্ষা করা উচিত। ডাক্তার যদি দেখেন পেপ স্মিয়ার টেস্ট স্বাভাবিক তবে তিন বছর পরে আসতে বলেন। যদি কোনও মহিলার নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় পিরিয়ড হয় তবে ডক্টরের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে পেপ স্মিয়ার টেস্ট বা স্ক্রিনিং টেস্ট করান না।
চিকিৎসকরা পেপ স্মিয়ার টেস্টের আগে কিছু বিষয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সেগুলো হলো-
১. সহবাস না করা
২. যোনিতে চুলকানো
৩. ট্যাম্পন বা যোনি লুব্রিকেশন ব্যবহার করা
৪. যোনি ক্রিম, সাপোজিটরি বা ওষুধ ব্যবহার করা
৫. জন্ম নিয়ন্ত্রণ ফোম, ক্রিম বা জেলি ব্যবহার করা
তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
সান নিউজ/পিডিকে