লাইফস্টাইল ডেস্ক: আপনার ডায়াবেটিস থাকলে বছরের যেকোনো সময় পায়ের যত্ন নেয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শীতকালে পায়ের প্রতি আরো বেশি খেয়াল রাখতে হয়। ঠান্ডার দিনগুলোতে পায়ের সুস্থতা বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এসময় পায়ে অসাড়তা ও রক্ত সরবরাহে ঘাটতির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শীতকালীন আর্দ্রতা, ঠান্ডা ও শুষ্কতা ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, বলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ফুট স্পেশালিস্ট মাইকেল শ্লোনস্কি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীকে শীতকালে পায়ের আলসার বা ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে এসব সমস্যা এত তীব্র হতে পারে যে পা কেটে ফেলার প্রয়োজন হবে। এখানে শীতের মাসগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্নে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।
১/ প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করুন: মারাত্মক পরিণতি এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তাদের পায়ের প্রেশার পয়েন্ট ও আঙুলের ফাঁকসমূহ চেক করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ডা. শ্লোনস্কি বলেন, ‘আপনার ত্বকে ফাটা, ক্ষরণ, রঙে পরিবর্তন, গন্ধে পরিবর্তন ও ব্যথা আছে কিনা লক্ষ্য করুন। আপনার মোজাতে দাগ আছে কিনা দেখুন। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মোজা পরুন। আপনার জুতায় কোনো পাথর বা পায়ে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে এমন কিছু আছে কিনা চেক করুন।’ ডায়াবেটিক ফুট কেয়ারের অংশ হিসেবে আপনার পায়ের যেকোনো পরিবর্তন চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।
২/সঠিক জুতা পরুন: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শীতকাল বড়ই চ্যালেঞ্জিং মৌসুম। এসময়ের ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও সেইসঙ্গে নিম্ন রক্তপ্রবাহ পায়ে আলসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। নিশ্চিত হোন যে আপনার শীতকালীন জুতা উষ্ণতা দিচ্ছে ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করছে। সূচালো জিনিস জুতার তলায় সহজে ভেদ করতে পারে এমন জুতা এড়িয়ে চলুন। আঁটসাঁট জুতা পরবেন না, এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যাবে। আর্দ্রতা ধরে রাখে এমন ম্যাটারিয়ালে তৈরি জুতা পরিহার করুন ও সঠিক মোজা বেছে নিতেও ভুলবেন না। ডা. শ্লোনস্কি বলেন, ‘পশমের মোজা সুরক্ষা ও উষ্ণতা দুটোই দিতে পারে। আর্দ্রতার ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করতে মোজার নিচে পলিপ্রোফাইলিন স্টকিংস পরতে পারেন।’
৩/পা শুষ্ক রাখুন: শীতের রাতে বা সকালে বাইরে হাঁটলে আপনার পা সহজেই স্যাঁতসেঁতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব আর্দ্রতা মোজা, পা ও আঙুলের ফাঁকে দীর্ঘক্ষণ থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়ার বসতি গড়ে ওঠতে পারে। বাইরে থেকে আসা অথবা গোসলের পর সতর্কতা সহকারে আপনার ভেজা পা শুকিয়ে নিন। ডা. শ্লোনস্কি বলেন, ‘আপনার পায়ের ত্বকের কোথাও বিবর্ণ হয়ে গেছে কিনা দেখুন- এই বিবর্ণতা অতিরিক্ত আর্দ্রতার লক্ষণ হতে পারে। পায়ের সকল অংশকেই শুষ্ক রাখা প্রয়োজন, এমনকি আঙুলের ফাঁকসমূহও। যত দ্রুত পারেন ভেজা মোজা খুলে ফেলুন।’
৪/ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন: ডায়াবেটিস জনিত স্নায়ুর ক্ষতি ও নিম্ন রক্তপ্রবাহ পায়ের ময়েশ্চারাইজিং গ্ল্যান্ডের ফাংশন কমিয়ে ফেলতে পারে। এর ফলে পায়ের প্রাকৃতিক আর্দ্রতার ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। এসময় হিটারের ব্যবহারে পায়ের শুষ্কতা আরো বেড়ে যাবে ও ত্বক ফেটে যাবে, জানান ডা. শ্লোনস্কি। শীতকালে পায়ে খরা প্রতিরোধে চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিক ফুট কেয়ারের অংশ হিসেবে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রতিদিন গোসলের পর এ ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন, কিন্তু পায়ের আঙুলের ফাঁকসমূহে অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন না।
৫/নখ কাটুন: পায়ে ইনফেকশন ও আলসারের অন্যতম কারণ হচ্ছে নখ না কাটা অথবা নখের সংক্রমণ। নখ কাটার প্রক্রিয়া সঠিক না হলেও পায়ে সমস্যা হতে পারে। নখ কাটার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার ডায়াবেটিস ডাক্তার থেকে জেনে নিতে পারেন। প্রথমে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নখকে নরম করুন। এরপর সোজাসুজি নখ কাটুন। আপনার নখ কাটতে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে নখের সমস্যা রয়েছে এমন লোকদের সম্প্রতি ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নখ পুরু হলে, ভেঙে গেলে অথবা বিবর্ণ হলে বিশেষজ্ঞের সেবা নিন।
৬/উষ্ণতা থেকে রক্ষা করুন: আপনার পায়ের স্নায়ু ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে শীতকালে পায়ে অতিরিক্ত উষ্ণতা সরবরাহ করবেন না, কারণ এতে সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। উষ্ণ জলে পা ডোবানো, বৈদ্যুতিক কম্বল, হিটিং প্যাড ও রেডিয়েটর ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন। সবসময় পা ভেজানোর আগে হাত বা বাথ থার্মোমিটার দিয়ে পানির তাপমাত্রা চেক করুন। ডা. শ্লোনস্কি বলেন, ‘দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাত্রার পোড়া থেকে পায়ে বড় সমস্যা হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব আপনার পায়ের যেকোনো সমস্যা চিকিৎসককে অবহিত করুন। আপনার ডায়াবেটিস থাকলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসার গুরুত্ব রয়েছে।’
৭/ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করুন: ডায়াবেটিক ফুট কেয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ডায়াবেটিস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের উপসর্গ প্রকাশ কিংবা পরিণতিতে ভোগার অন্যতম প্রথম স্থান হচ্ছে পা। ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আপনার ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। আপনাকে প্রয়োজনে ইনসুলিন নিতে হবে, খাদ্যতালিকা সাজাতে হবে, ওজনকে স্বাস্থ্যকর সীমার মধ্যে রাখতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও ধূমপানের মতো বদভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।
সান নিউজ/পিডিকে