ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ইতিহাসের ট্রাজিক গল্পগুলোর তারিকায় নতুন এক গল্প সংযোজিত হল। সেই গল্পটির নাম হতে পারে “লি ওয়েনলিয়াং”।
বিশ্বের নতুন মহামারী করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রথম সনাক্তকারী এবং সতর্ককারী মানুষটিও মৃত্যূকে বরণ করে নিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই। শুধু তাই-ই নয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, প্রাণঘাতী যে ভাইরাসটি বিশ্বজুড়েই তোলপাড় সৃষ্টি করেছে সেই ভাইরাসটি সম্পর্কে মানুষকে জানানো প্রথম সেই ব্যক্তিকে পুলিশী হেনস্থার শিকার হতে হয়ছিল চীনে।সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে মুচলেকাও দিতে হয়। ট্রাজিক কাহিনীটা তাই আর একটু বেশিই যেন তাঁকে ঘিরে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনলিয়াং। নতুন একটি ভাইরাসের খবর দিয়েছিলেন তিনি, সতর্ক করেছিলেন মানুষকে, চীনা সরকারকে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ পাত্তা না দিয়ে উল্টো তার মুখ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়। পরে সেই ভাইরাসটিই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস হিসেবে শনাক্ত হয়। এরপরই চীনে বীর বনে যান ওই চিকিৎসক।
সবশেষ সেই চিকিৎসকও হার মানলেন করোনা ভাইরাসের কাছে। চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে মর্মান্তিক এই খবরটি দিয়েছে বিবিসি।
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৩৪ বয়সী এই চিকিৎসক। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথম লি ওয়েনলিয়াং-ই তার সহকর্মীদের ওই ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
বিবিসি জানায়, গত ডিসেম্বরে সংক্রমণের সাতটি ঘটনা পান এই চিকিৎসক। তার কাছে এই ভাইরাসটিকে দেখতে সার্সের মতো মনে হয়েছিল। সেই সার্স ভাইরাসও ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারী তৈরি করেছিল।
ডা. লি গ্রুপ চ্যাটে সহকর্মী চিকিৎসকদের ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করে সংক্রমণ এড়াতে ‘প্রতিরক্ষামূলক পোশাক’ পরার পরামর্শ দেন। তবে তখনও তিনি জানতেন না, যে রোগটি ধরা পড়েছে সেটি করোনা ভাইরাস।
তবে লি’র এই জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডে বিব্রত বোধ করতে থাকে চীন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সতর্কবার্তা লেখার চারদিন পর পুলিশ তার সঙ্গে দেখা করে। তাঁকে হুমকি দেয়া হয়। ‘সামাজিক শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মিথ্যা মন্তব্য’ করার অভিযোগে মুচলেকায় স্বাক্ষরও নেয়া হয় তার।
মুচলেকায় লেখা ছিল, ‘আমরা আপনাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনি যদি জেদ ধরে এমন অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যান, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
শুধু তিনিই নন, এই অভিযোগে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তখন পুলিশ জানিয়েছিল।
এক সময় আবার কথা বলতে শুরু করেন লি ওয়েনলিয়াং। জানুয়ারির শেষের দিকে ওয়াইবোতে মুচলেকা পত্রের ছবি প্রকাশ করে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেন ডা. লি। এরইমধ্যে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু প্রথম দিকে করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব না দেয়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে যায় পুরো বিশ্বের। ডা. লি-এর সতর্কবার্তার মাসখানেকের মধ্যে উহান ও এর আশেপাশের এলাকায় মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। আর সেখান থেকে একের পর এক দেশে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এরইমধ্যে মারা গেছেন ৬৩৬ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ চীনের নাগরিক। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার মানুষ।