আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নিজের দেশে চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যেই রাশিয়ায় পা রেখেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো। এই সফরে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
একটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা থেকে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর রাশিয়া সফর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৯ আগস্ট দেশটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সাম্প্রতিক সময়ে বেলারুশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।
নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে এমন অভিযোগে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে বিক্ষোভ করছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড় লুকাশেঙ্কো। তিনি কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন না।
লুকাশেঙ্কোর এই সফরের ফলে বেলারুশের বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রথমবার দু'দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে মুখোমুখি সাক্ষাত হচ্ছে। ওই নির্বাচনে ৮০ দশমিক ২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন লুকাশেঙ্কো। অন্যদিকে, তার প্রধান বিরোধী সভেতলানা তিখানোভস্কায়া পেয়েছেন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।
অথচ জনসমর্থনের দিক থেকে বহুগুণে এগিয়ে আছেন সভেৎলানা। তার সমর্থকদের দাবি, স্বৈরাচার লুকাশেঙ্কোকে ক্ষমতায় রাখতে নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতি এবং জালিয়াতি করা হয়েছে। ‘অনেস্ট পিপল’ নামে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক গ্রুপের দাবি, সভেৎলানা অন্তত ৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে জয়লাভ করেছেন। সে কারণে ভোট পুনর্গণনার দাবিও জানানো হয়। যদিও এসব তোয়াক্কাই করছেন না লুকাশেঙ্কো।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের স্বৈরাচারী সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু চীন-রাশিয়ার মতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলো ঠিকই লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়েছে। এমনকি প্রথম থেকেই লুকাশেঙ্কোর পাশে রয়েছে রাশিয়া।
বেলারুশ সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে বেলারুশের সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বার বার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর আগে এক বিবৃতিতে পুতিন জানিয়েছিলেন যে, তিনি একটি পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত করে রেখেছেন। যদি বেলারুশের প্রয়োজন হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে ওই বাহিনীকে তিনি মিত্র দেশটিতে পাঠাবেন।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালেই লুকাশেঙ্কোকে বহনকারী প্লেনটি রাশিয়ার সোচি শহরে অবতরণ করেছে। এর মাত্র একদিন আগেই বেলারুশজুড়ে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ থেকে ৭৭৪ জনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
বেলারুশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার জানিয়েছেন, রাজধানী মিনস্ক থেকে ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে। রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানী মিনস্কে লাখো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। লুকাশেঙ্কোর এই সফরে তিনি এবং পুতিন দু'দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক, বিদ্যুৎ, বাণিজ্য এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
রোববারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রতি রাশিয়ার আগ্রহের বিষয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন। আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপ মোটেও ভালো কিছু নয়। ১৯৯৪ সাল থেকেই দেশের ক্ষমতায় রয়েছেন লুকাশেঙ্কো।’
সান নিউজ/ এআর