আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দীর্ঘ নাটকীয়তার পর অবশেষে বুধবার ভোটাভুটির মাধ্যমে সিনেটে অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি পেলেন মার্কিন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আর সরে যেতে হচ্ছে না। ভোটে হেরে গেলে ট্রাম্পকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের হাতে ।
গত বছরের শেষের দিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে অভিশংসিত করে। এই অপরাধে তাঁর বিচারের ভার সর্বশেষ ন্যাস্ত হয় সিনেটের হাতে।
এবছরের ১৮ জানুয়ারি ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য নথি জমা দেন। এতে তাঁরা নিম্নকক্ষে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি তাঁকে কেন ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা উচিত তার ব্যাখ্যাসহ কারণ তুলে ধরেন।
কিন্তু রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট বুধবার দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এটা ট্রাম্পের দ্বিতীয় জীবন। সুত্র: বিবিসি।
তবে সিনেটারদের জন্য এই সিদ্ধান্তে আসাটা খুব সহজ ছিল না। কারণ খুব কম ভোটের ব্যবধানে অভিশংসন থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ট্রাম্প। ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে ভোটাভুটি হয়। সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ থেকে ট্রাম্প মুক্তি পেয়েছেন ৫২-৪৮ ভোটে। আর কংগ্রেসকে অমান্য করার অভিযোগ খারিজ হয়ে যায় ৫৩-৪৭ ভোটের ব্যবধানে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিম্নকক্ষটি ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে।
এরফলে সেখানে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে। সেখানে অনুমিতভাবেই রায় ট্রাম্পের পক্ষে গেছে।
ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সব সময় একটি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং রিপাবলিকান সিনেটররা আইন না থাকার ব্যাপারটিকে সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি অভিশংসিত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়নি।
সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ১৯৯৮ সালে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার আগে ১৮৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ক্লিনটন ও জনসনদের কাউকেই সিনেট দোষী সাব্যস্ত করেনি।
অভিশংসন কি?
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যেখানে আইন তৈরি করা হয়, তারা দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে অপরাধের কারণে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোন বড় বা লঘু অপরাধ।
অভিশংসন কিভাবে করা হয়?
সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ মিলে গঠিত কংগ্রেস। ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস থেকে। এটি মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ। এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হতে হবে। আর সেটা পাস হলে পরের ধাপে বিচার অনুষ্ঠিত হবে সিনেটে, যেটা কংগ্রেসের দ্বিতীয় অংশ।
এটা অনেকটা আদালত কক্ষের মতো, যেখানে সিনেটররা বিচারক বা জুরি হিসেবে কাজ করবেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট দোষী কি নির্দোষ। প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে হলে এই সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরকে ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতে হয়।
সান নিউজ/সালি