আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দেশে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশি পোশাকের ক্রয়মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পোশাক ক্রেতাদের বৈশ্বিক সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ-পানির ভর্তুকি বন্ধের নির্দেশ
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এক ই-মেইল বার্তায় ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এ সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামার।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বখ্যাত সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইলার ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ও গ্যাপসহ অন্যান্য খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশি পোশাকের ক্রয়মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাংলাদেশে শ্রমিক মজুরি বাড়ানোর ফলে পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে কারখানাগুলোর যে পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তার ক্ষতিপূরণে এ বাড়তি মূল্য সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) ১০০০-এর বেশি সদস্য রয়েছে। সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইলার ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম ও গ্যাপসহ অন্যান্য ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান সংস্থাটির সদস্য।
আরও পড়ুন: আরও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
সারা বিশ্বে চীনের পর সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রফতানিকারক হলো বাংলাদেশ। সম্প্রতি পুলিশের সাথে পোশাক শ্রমিকদের প্রাণঘাতী বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা (১১৩ মার্কিন ডলার) করেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পোশাক শ্রমিকদের নতুন এ মজুরি আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে।
কারখানা মালিকরা জানান, জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করায় তাদের মুনাফা হ্রাসসহ উৎপাদন ব্যয়ও ৫-৬ শতাংশ বাড়বে। এ খাতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, তৈরি পোশাকের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ১০-১৩ শতাংশ শ্রমিকদের পেছনে ব্যয় হয়।
উৎপাদন ব্যয় ৫-৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে ক্রয়মূল্য একই পরিমাণে বাড়াবেন কি না- জানতে চাইলে এএএফএর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামার বলেন, অবশ্যই। আমরা এবং আমাদের সদস্যরা বেশ কয়েকবার বলেছি, মজুরি বৃদ্ধিকে সমর্থন জানানোর জন্য আমরা দায়িত্বশীল ক্রয় পদ্ধতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন: ভবিষ্যতে আমরা খাদ্য রফতানি করব
তিনি বলেন, আমরা বার্ষিক ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা পদ্ধতি গ্রহণের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছি, যাতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে সুবিধাবঞ্চিত না হন।
রয়টার্স বলছে, সস্তা শ্রমই বাংলাদেশকে পোশাক শিল্প গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। দেশটিতে এ শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৬ শতাংশ আসে এ খাত থেকে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যমতে, মজুরি বাড়ানোর পরও বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি আঞ্চলিক তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের তুলনায় কম থাকবে। দেশটির কিছু শ্রমিক বর্ধিত মজুরিকে একেবারে কম বলছেন।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ফের শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিয়েতনামে একজন শ্রমিক মাসে গড়ে ২৭৫ মার্কিন ডলার ও কম্বোডিয়ায় ২৭৫ মার্কিন ডলার পান, যা বাংলাদেশের বাড়ানো মজুরির (১১৩ ডলার) তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পোশাক বিক্রেতা অ্যাবারক্রম্বি অ্যান্ড ফিচ ও লুলুলিমনসহ এএএফএর কিছু সদস্য ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি
গত জুলাইয়ে এ বিষয়ে পোশাক ক্রেতাদের যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বৈশ্বিক সংগঠন এএএফএর প্রধান নির্বাহী লামারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের খুচরা বিক্রেতারাই বাংলাদেশি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। বর্তমানে বৈশ্বিক ধীর অর্থনীতির কারণে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য খুচরা বিক্রেতার মতো ফ্যাশন কোম্পানিগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বিশ্বজুড়েই ক্রেতারা এখন আগের তুলনায় কম কিনছেন।
সান নিউজ/এনজে