আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসীদের পৃথক হামলায় ২ সেনা সদস্যসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। হামলার পর নারী ও শিশুসহ অন্তত ৬০ জনকে অপহরণ করেছে বন্দুকধারীরা।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলিতে নিহত ৩
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির উত্তরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার নাইজেরিয়ায় দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জামফারা প্রদেশে বন্দুকধারীরা ৮ জনকে হত্যা করে এবং কমপক্ষে ৬০ জনকে অপহরণ করে বলে বাসিন্দারা এবং স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন।
সন্ত্রাসীরা প্রদেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ডজন ব্যক্তিকে অপহরণ করার মাত্র ২ দিন পরে এ ঘটনা ঘটল।
আরও পড়ুন: নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্র
এছাড়া দেশটির উত্তর-পূর্বে সামরিক নিরাপত্তার অধীনে থাকা গাড়ির কনভয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে সন্দেহভাজন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীরা। এ সময় ২ সেনাসহ ৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র এবং হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এক গাড়িচালক জানিয়েছেন।
ঐ প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলাকারীরা ৫ টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একটি ট্রাক নিয়ে চলে যায়।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, তিনি কিভাবে তার দেশের এ ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলা করবেন। ব্যয়বহুল জ্বালানি ভর্তুকি অপসারণ ও তার অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে। এটি কার্যতই দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
আরও পড়ুন: সোমালিয়ায় বিস্ফোরণ, নিহত ১০
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, রোববার ভোরে বন্দুকধারীরা জামফারার গ্রামীণ মাগামি সম্প্রদায়ের একটি সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণের চেষ্টা করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়।
স্থানীয়ভাবে ডাকাত নামে পরিচিত সশস্ত্র গ্যাং সদস্যদের তাণ্ডবে জামফারা প্রদেশটি কার্যত বিপর্যস্ত। সেখানে সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের জন্য সাধারণ মানুষকে প্রায়ই অপহরণ করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা জানান, ৩ টি দলে থাকা বন্দুকধারীরা সেনা ঘাঁটি, মাগামি ও কাবাসার সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়। এছাড়া ৬০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
আরও পড়ুন: বেনিনে জ্বালানি বিস্ফোরণ নিহত ৩৫
টেলিফোনে মাগামির বাসিন্দা শুয়াইবু হারুনা রয়টার্সকে বলেন, দস্যুরা বন্দুক ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অনেক মোটরসাইকেলে চড়ে এখানে হামলা চালায় এবং বিক্ষিপ্তভাবে গুলিবর্ষণ করে।
নিহতদের দাফনে উপস্থিত হারুনা জানান, এ হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। কাবাসা সম্প্রদায়ের ঈসা মোহম্মদ জানান, ৪ জন নিহত এবং আরও কয়েক ডজন মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে।
তবে নাইজেরিয়ার পুলিশ ও সেনাবাহিনী এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এ অপরাধীদের দল স্থানীয়ভাবে মূলত ডাকাত হিসাবে পরিচিত। গত ৩ বছর ধরে তারা নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এ সময় তারা হাজার হাজার মানুষকে অপহরণসহ শত শত মানুষকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প
এসব ডাকাতদল সাধারণত মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে এসে হামলাস্থলে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, লুটপাট করে এবং মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে। ডাকাতদের এ রক্তক্ষয়ী হামলার ফলে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় রাস্তায় চলাচল বা খামারে ভ্রমণ করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ দেশ নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ডাকাতি, হত্যা, লুটপাট, স্কুলের শিক্ষার্থীদের বন্দি ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধ নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। এসব অপরাধ বন্ধে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদেক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ৯০৯ জনের মৃত্যু
নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম ও আইএস (ইসলামিক স্টেট) পশ্চিম আফ্রিকা শাখার সদস্যরাও নিয়মিত এসব অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গত ১৪ বছর ধরে নাইজেরিয়া ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
সান নিউজ/এনজে