আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় গত ৪ দিনে দেশজুড়ে অন্তত ৫০ জান্তা সেনা নিহত হয়েছে। জান্তা বিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ) এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর (ইএও) হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ২৯৬
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম দ্য ইরাবতী এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধারা সারা দেশে শাসক জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে গত ৪ দিনে সাগাইং, ম্যাগওয়ে, মান্দালয় ও তানিনথারি অঞ্চলে এবং চিন, শান, সোম ও কারেন প্রদেশে জান্তা সেনাদের প্রাণহানির এসব ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
যদিও সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, কিছু সামরিক হতাহতের পরিসংখ্যান স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
আরও পড়ুন: জি-২০ তে যোগ দেবেন না পুতিন
প্রতিবেদনে দ্য ইরাবতী বলছে, বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সাগাইং অঞ্চলের ইয়ানমাবিন টাউনশিপে ৫ জান্তা সেনা নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। ১৮ টি প্রতিরোধ গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন লিবারেশন ফ্রন্ট (ইউএলএফ) কিয়াউক কোন গ্রামের কাছে ১০০ সেনার একটি সামরিক ইউনিটের সাথে সংঘর্ষের পর হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
নিকটবর্তী মনিওয়া শহরে অবস্থিত নর্থ ওয়েস্ট মিলিটারি কমান্ডের সদর দফতর তাদের সেনাদের সাহায্য করার জন্য সংঘর্ষের স্থানে হাউইৎজারের মাধ্যমে ৪ টি দূরপাল্লার গোলা নিক্ষেপ করে। এতে ৬ প্রতিরোধ যোদ্ধা আহত হয়। এ সময় প্রতিরোধ দলগুলো গোলাবারুদসহ সামরিক অস্ত্র জব্দ করে।
আরও পড়ুন: পালটা হামলা শুরু ইউক্রেনের
জান্তা বিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রকেট চালিত গ্রেনেড ব্যবহার করে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) মান্দালয় অঞ্চলের সিন্টগু টাউনশিপের শোয়ে পাই গ্রামের পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ)।
মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়, থানায় কয়েক মিনিটের জন্য বন্দুকযুদ্ধ চলে। এ সময় সেখানে পুলিশ প্রধানসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া গত সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঐ অঞ্চলের মাদায়া শহরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ১৫ জন জান্তা সেনা নিহত হয়।
আরও পড়ুন: পেড্রো আসছেন না জি-২০ সম্মেলনে
মিয়াইং পিডিএফ-এর ড্রোন ইউনিট মিয়াইং ইউএভি ফাইটার বলছে, ৬ টি প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে তারা গত বৃহস্পতিবার সকালে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের মিয়াইং শহরের একটি গ্রামে বিশ্রামরত সামরিক ইউনিট এবং লজিস্টিকবাহী যানবাহনে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে শাসক বাহিনীর অনেক সেনা নিহত বা আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন বাইডেন
পিডিএফ বলছে, মঙ্গলবার রাতে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের শহরে শাসক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয়। প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি সেখানকার বাসিন্দাদের অবিস্ফোরিত গোলা-বারুদ থেকে দূরে থাকার এবং যুদ্ধের শব্দ শুনলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া তানিনথারিতে আবারও সামরিক চৌকিতে হামলা ঘটেছে। ওক অ্যাওয়ে কলাম দাওয়েই বলছে, অন্যান্য স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে তারা গত বৃহস্পতিবার তানিনথারি অঞ্চলের দাওয়েই টাউনশিপের মাউং মে শাউং গ্রামের কাছে সামরিক চেক পয়েন্টে হামলা চালায়। এতে ২ জন সেনা নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।
আরও পড়ুন: পারমাণবিক সাবমেরিন উদ্বোধন কিমের
এ সময় সেখানে প্রতিরোধ বাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি। অবশ্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বারবরই এ অঞ্চলের সামরিক চেক পয়েন্টগুলোতে হামলা চালিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রয়ারি মাসের শুরুর দিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত এ দেশটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠী সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করে।
আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর গেলেন রাষ্ট্রপতি
গত আগস্ট মাসে মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) জানায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে নিজেদের সশস্ত্র শাখা এবং বিদ্রোহী মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে সংঘর্ষের সময় মিয়ানমারের ৩০১২ জন জান্তা সৈন্য নিহত এবং ৪০২১ জন সেনা আহত হয়।
সে সময় দ্য ইরাবতী জানায়, পিডিএফ এবং ইএও গোষ্ঠীগুলো সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ অব্যাহত রাখার কারণে জান্তা সরকার ও বাহিনী এখন প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গত জুনের শেষের দিক থেকে শান এবং কাচিন প্রদেশে আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ক্রমবর্ধমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এসব গোষ্ঠী।
সান নিউজ/এনজে