আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআর কঙ্গো) জাতিসংঘ মিশন বিরোধী বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর কঠোর দমন-পীড়নে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ক্র্যাকডাউনে আরও ৫৬ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নৌকায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১১
বুধবার (৩০ আগস্ট) দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায় সহিংস বিক্ষোভের জেরে সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগে প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, বুধবার পূর্ব কঙ্গোলিজ শহর গোমায় জাতিসংঘ বিরোধী হিংসাত্মক বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর কঠোর দমন-পীড়নে ৪৩ জন নিহত এবং ৫৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বোমা হামলা, নিহত ৯ সেনা
বিক্ষোভে একজন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরে কঙ্গোলিজ সৈন্যরা ক্র্যাকডাউন শুরু করে। সেই সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি সংস্থার বিরুদ্ধে আয়োজিত এ বিক্ষোভ জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। রয়টার্স যদিও ফুটেজটি যাচাই করতে পারেনি।
কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনটির নাম হচ্ছে মনুস্কো। এ মিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতার বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মূলত বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এ সহিংসতার কারণে বুধবার দেশটির ঐ শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: আজ বায়ুদূষণে ঢাকা পঞ্চম
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর থেকে জাতিসংঘের মনুস্কো মিশন দেশটির নাগরিকদের প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, শান্তিরক্ষীরা বহু বছরের মিলিশিয়া সহিংসতার বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজকরা এ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে দেখা যায়, বেসামরিক পোশাকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারী ও পুরুষরা লাঠি ও পাথর দিয়ে একজন পুলিশকে মাটিতে ফেলে মারধর করছেন।
আরও পড়ুন: তাপমাত্রা কমে বাড়তে পারে বৃষ্টি
এর আগে কঙ্গোর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এক পুলিশ সদস্যকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার বলেছে, বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ১৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সামরিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কঙ্গোর সৈন্যরা একটি লরিতে বহু মৃতদেহ স্তূপাকার করে রাখছে এবং গাড়িতে করে মৃতদেহগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে ফুটেজটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
আরও পড়ুন: ঢাকার যেসব সড়ক বন্ধ থাকবে আজ
গোমায় ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের স্থানীয় শাখার প্রধান অ্যান-সিলভি লিন্ডার জানান, বিক্ষোভের পর তার ক্লিনিকে গুরুতর ছুরিকাঘাত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে বহু আহত মানুষ এসেছেন। ক্লিনিকে পৌঁছানোর সময়ই অনেকে মৃত অবস্থায় ছিল বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে কঙ্গোর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মনুস্কো। এক বিবৃতিতে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছে তারা।
এছাড়া সহিংসতার ঘটনায় তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করতে এবং আটককৃতদের সাথে মানবিক আচরণ করতে ও অধিকারকে সম্মান করার আহ্বানও জানিয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনটি।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে মনুস্কো বিরোধী বিক্ষোভের ফলে গোমা এবং বুটেম্বো শহরে ১৫ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩ জন শান্তিরক্ষীও ছিলেন।
রয়টার্স বলছে, বছরের পর বছর ধরে চলা বিদ্রোহী ও সংঘাত, সেই সাথে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে মানবিক সংকট ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নর্থ কিভু প্রদেশ এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলোতে প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সান নিউজ/এনজে