আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭।
আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ভোরে ইন্দোনেশিয়ার বালি সাগরসহ উপকূলীয় বালি ও লম্বক অঞ্চলে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: কঙ্গোয় সন্ত্রাসী হামলা, নিহত ১৪
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ইউরোপিয়ান-মেডিটেরিনিয়ান সিমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ।
ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার বালি ও লম্বক দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে সমুদ্রের গভীরে ৭.০ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সেখানকার বাসিন্দারা শক্তিশালী এ ভূমিকম্পের পর আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যান।
ইএমএসসি বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার মাতারাম থেকে ২০৩ কিলোমিটার (১২৬ মাইল) উত্তরে ও ভূপৃষ্ঠের ৫১৬ কিলোমিটার নীচে খুব গভীরে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি
ইন্দোনেশিয়া ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থাগুলো বলছে অবশ্য মঙ্গলবার ভোরে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.১ ছিল। এ ঘটনায় কোনোও ধরনের সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়নি।
ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক সংস্থা অনুসারে, বালি ও লম্বকের উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি ভোর ৪ টার আগে অনুভূত হয়। এরপর ৬.১ ও ৬.৫ মাত্রার আরও ২ টি ভূমিকম্প অনুভূত হয় ঐ অঞ্চলে।
রয়টার্সকে বালির মারকিউর কুটা বালি নামক হোটেলের ম্যানেজার সুয়াদি ফোনে জানিয়েছেন, হোটেলের অতিথিরা কয়েক সেকেন্ডের জন্য কম্পন অনুভব করার পরে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। তাদের অনেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসেন, এতে বিল্ডিংয়ের কোনও ক্ষতি হয়নি।
আরও পড়ুন: ভারী বর্ষণে তাজিকিস্তানে ভূমিধস, নিহত ১৩
তিনি জানান, ‘ভূমিকম্পের পর বেশ কিছু অতিথি তাদের কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান ও তারা এখনও হোটেল এলাকায় অবস্থান করছে।’
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ সংস্থা বিএনপিবি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপিবি’র মুখপাত্র আব্দুল মুহারী জানান, ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরে আঘাত হেনেছে, তাই এটি ধ্বংসাত্মক হয়নি।
প্রসঙ্গত, এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়ার জন্যসংখ্যা সাড়ে ২৭ কোটির বেশি। ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে নিয়মিত এ দেশটিতে ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে থাকে।
আরও পড়ুন: সংলাপে বসছে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য
গত বছরের ২১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার ঐ ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে ৫৬ জনের প্রাণহানির তথ্য জানা যায়। পরে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ জনে। বহু মানুষ আহত হয়েছিলেন।
এছাড়াও, ২০০৯ সালে পাদাংয়ে শক্তিশালী ৭.৬ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে ও আহত হন অনেকে। এ ভূমিকম্পে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরখাস্ত
তারও আগে, ২০০৪ সালে সুমাত্রার উপকূলে ৯.১ মাত্রার মাত্রার ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পরপর সুনামি আঘাত হানে। তখন ঐ অঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের তথাকথিত ‘রিং অব ফায়ারে’ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটিতে মূলত প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটে। টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ঘটে এখানে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশই এর ফলে ভূমিকম্পের অত্যধিক ঝুঁকিতে আছে।
সান নিউজ/এএ