আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করা হয়েছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে। রাজধানী নেইপিদোর একটি সরকারি বাসভবনে সু চিকে স্থানান্তর করেছে ক্ষমতাসীন জান্তা।
আরও পড়ুন : ফিলিপাইনে টাইফুনের আঘাত, নিহত ৬
স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ জুলাই) বিবিসি বার্মিজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সু চি যে কারাগারে বন্দি ছিলেন, সেখানকার একটি সূত্র।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতারের পর মে মাস পর্যন্ত সু চিকে গৃহবন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তারপর জুন মাসে তাকে একটি কারাগারে পাঠানো হয়। কারা সূত্রের তথ্য অনুসারে, সোমবার কারাগার থেকে ফের সু চিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে।
কারাগার থেকে তার স্থানান্তরের বিষয়টি সামরিক জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে তাকে কারাগার থেকে বের করে গৃহবন্দী করার পদক্ষেপকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
ক্ষমতা দখলের পর এনএলডি’র প্রেসিডেন্ট অং সান সু চিসহ তার দলের শীর্ষ ও মধ্যমসারির বহু নেতা-কর্মীকে কারাবন্দি করে সরকার। সু চিকে অবশ্য আলাদা একটি বিশেষ কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : ৪৫ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার!
প্রায় আড়াই বছর সেই কারাগারে বন্দি ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ৭৮ বছর বয়সী এই গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী। এই আড়াই বছরে সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ এনেছে জান্তা।
রাজধানীর একটি সামরিক আদালতে সেসব অভিযোগের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলার রায় দিয়েছেন সামরিক আদালত। সেসব রায়ে সু চিকে ৩৩ বছর কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
জান্তার কঠোর নজরদারির কারণে সু চি কেমন আছেন বা তার সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানার কোনো উপায় ছিল না। কেবল আদালতে শুনানির দিন কারাগার থেকে তাকে বের করা হতো এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হতো আদালতে।
আরও পড়ুন : সেনেগালে সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২৩
গত জুনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে সু চির মুক্তি দাবি করেন তার ছেলে কিম অ্যারিস। গত ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কিম সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মিয়ানমারে মায়ের বন্দিদশা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন এবং সেনাবাহিনী তার মা সম্পর্কিত কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
তারপর গত ১৫ জুলাই থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমোদউইনাই জানান, গত ৯ জুলাই কারাগারে সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বৈঠক করেছেন তিনি। তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের কারাবন্দি এই নেত্রী শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মিয়ামারের অভ্যন্তরে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বন্ধুহীন হয়ে পড়ে মিয়ানমার। ফলে ভেতর এবং বাইরে উভয়দিকেই চাপে পড়ে জান্তা।
জান্তার ওপর চাপসৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। মিয়ানমার এই জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
আরও পড়ুন : নাইজারে সেনা অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট আটক
এছাড়া ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এরপরও মিয়ানমার অস্ত্র আমদানি ও অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল আমদানি করে যাচ্ছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সু চি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণতন্ত্রের আইকনদের একজন। প্রায় ১৫ বছর আটক থাকার পর ২০১০ সালে তার মুক্তি মিয়ানমার ও সারাবিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
পরবর্তীতে মিয়ানমারের ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ ওঠে। নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে ও বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।
সান নিউজ/জেএইচ