ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া গেল ভারতে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। আগের ১৬টি দেশের সঙ্গে এই তালিকায় এবার যোগ হল ভারতের নাম। আর এর মাধ্যমে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এই খবর মারাত্মক উদ্বেগের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী পাওয়া গেছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত ওই রোগী চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং তাকে কেরালার একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আক্রান্তের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহান থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার চেয়ে অন্য কোনও উত্তম বিকল্প নেই। নাগরিকদের ক্রমাগত চাপের কারণে উহান থেকে ভারতীয়দের ফেরত আনতে একটি বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উহানে ভারতীয় অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন; যারা সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় এই কর্মকর্তা বলেন, এই ভাইরাসে যারা সংক্রমিত হননি, শুধুমাত্র তাদেরকে বিমানে করে ফিরিয়ে আনা হবে। সেখান থেকে আনার পর দিল্লির বাইরে একটি স্থাপনায় তাদের ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
ভারতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলায় উদ্বেগের মাত্র বেড়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই মুহুর্তে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার চেয়ে প্রয়োজন নিজের সতর্কতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র রেজওয়ানুল হক বলেন, ভারতের খবরটি আমাদেরকে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ ভারত আমাদের একেবারেই কাছের রাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশ সরকার, চিকিৎসকসহ সাধারন মানুষের যথেষ্ঠ সতর্কতায় আমরা যে এখনও পর্যন্ত্র এই ভাইরাস থেকে দূরে আছি সেটিই এখনও পরাযন্ত স্বস্তির।
বেসরকারী একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নাসরিন সুলতানার মন্তব্য- করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার বেশ আগেভাগেই অনেক ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে এই মুহুর্তে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তে আরও জরুরী কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে চীন থেকে আসা এক বাংলাদেশি নাগরিককে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে চীন থেকে আসা এই যাত্রীর অতিরিক্ত তাপমাত্রা (জ্বর) ধরা পড়ে বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারে। এরপর তাকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেলথ সেন্টারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ায় সাজ্জাদ বলেন, ‘করোনার প্রাথমিক কিছু লক্ষণ থাকায় চীন থেকে আসা এক বাংলাদেশিকে আমরা কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। হাসপাতালে আরও পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
ভারতে নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে একজন আক্রান্ত এবং বাংলাদেশে করোনা সন্দেহে একজনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১৭০ জনের প্রাণহানি ও ৭ হাজার ৭১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।