ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে ৭৫ কোটি মশা ছাড়ার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ও সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু ও জিকার মতো প্রাণঘাতী রোগ বহন করা মশার সংখ্যা কমাতেই জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড এই মশাগুলো ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো৷ এই পদক্ষেপের ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
এপি জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্সিটেক বায়োটেকনোলজি নামের একটি কোম্পানি তাদের ল্যাবে সৃষ্ট কয়েক কোটি মশা উন্মুক্ত করবে৷ সংখ্যাটি ৭৫ কোটি বলে উল্লেখ করেছে সিএনএন৷ জিন পরিবর্তন করা এসব পুরুষ মশা রক্তের জন্য মানুষকে কামড়ানো ক্ষতিকর স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হবে৷ এর ফলে নতুন জন্ম নেয়া স্ত্রী মশা প্রকৃতিতে আর বেঁচে থাকতে পারবে না৷ আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এসব মশা পরিবেশের ক্ষতি ও ‘অনিচ্ছাকৃত পরিণতির’ দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে পরিবেশবাদীদের একটি দল একে ‘জুরাসিক পার্ক এক্সপেরিমেন্ট’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, জিন বদলে দেওয়া এসব মশা বাস্তুসংস্থানের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং এসব মশার কারণে হাইব্রিড, কীটনাশক-প্রতিরোধী মশারও জন্ম হতে পারে। তবে বিবিসি জানিয়েছে, জিন বদলে দেওয়া মশা নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর জোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও ফ্লোরিডায় এই পাইলট প্রকল্প সবুজ সংকেত পেয়েছে।
পরিবেশবাদীদের দাবি নাকচ করে দিয়েছে প্রকল্পটির সঙ্গে সম্পৃক্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি অক্সিটেক। তারা বলছে, জিন বদলে দেওয়া মশার কারণে মানুষ বা পরিবেশের কোন ধরনের ক্ষতিই হবে না। এ নিয়ে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া বেশ কিছু গবেষণার দিকেও ইঙ্গিত করেছে তারা। অক্সিটেক এর বিজ্ঞানী কেভিন গরম্যান এপিকে জানিয়েছেন, এরইমধ্যে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিলে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বলেছেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরে এমন কয়েক শত কোটি মশা ছেড়েছি৷ পরিবেশ বা মানুষের উপরে এর কোনেও সম্ভাব্য ক্ষতি নেই৷’
এ বছর মে মাসে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউএস এনভায়রনমেন্টাল এজেন্সি যুক্তরাজ্যভিত্তিক অক্সিটেককে জিন বদলে দেওয়া পুরুষ মশা উৎপাদনের অনুমতি দেয়। কোম্পানিটি ২০২১ সালে ‘ফ্লোরিডা কীজ’ নামে পরিচিত দ্বীপগুলোতে এসব মশা ছাড়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। মঙ্গলবার ‘ফ্লোরিডা কীজ মসকিউটো কন্ট্রোল ডিস্ট্রিক্ট’ তাদের আওতাধীন এলাকায় আগামী দুই বছরের মধ্যে জিন বদলে দেওয়া ৭৫ কোটি এডিস মশা ছাড়ার চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে। তবে অক্সিটেকের উৎপাদিত মশা ছাড়ার বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষ অবস্থান নিয়েছেন।
চেইঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটের এক পিটিশনে স্বাক্ষর করা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোকে ‘জিন বদলে দেওয়া পোকার পরীক্ষাগার’ বানানোর বিরোধিতা করেছেন।
ব্রাজিলে এ জিন বদলে দেওয়া মশা ব্যবহার করে সফলতা মিলেছে বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে অক্সিটেক। আগামী বছরের শুরুতে টেক্সাসেও এই ধরনের মশা ছাড়ার পরিকল্পনা করছে তারা। তবে তারা কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন পেলেও টেক্সাস অঙ্গরাজ্য কিংবা সেখানকার কোনো শহর বা এলাকা এখনও জিন বদলে দেওয়া মশা ছাড়ার অনুমতি দেয়নি।
‘জিন বদলে দেওয়া এসব মশা ছেড়ে মহামারীর মধ্যে অহেতুক ফ্লোরিডার বাসিন্দা, পরিবেশ ও বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে,’ বলেছে পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ। তবে অক্সিটেকের এক বিজ্ঞানী বলেছেন, তারা কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের একশ’ কোটিরও বেশি মশা ছেড়েছেন। কিন্তু কোথাও পরিবেশ বা মানুষের কোনো ধরনের ক্ষতি হতে দেখেননি।