আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের সঞ্জু ভগৎ আশপাশের সবার কাছে ‘প্রেগন্যান্ট ম্যান’ হিসেবে পরিচিত। কারণ তার সঙ্গে একজন অন্তঃসত্ত্বার চেহারার কোনো অমিল নেই। শরীরের বাকি অংশ প্রায় স্বাভাবিক। তবে পেট অস্বাভাবিক ফুলে থাকত।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ফের ট্রেন দুর্ঘটনা
১৯৬৩ সালে ভারতের নাগপুরে জন্মগ্রহণ করেন সঞ্জু ভগৎ। শরীরের এই অস্বাভাবিক আকৃতি নিয়ে অনেক কটূক্তি তাকে শুনতে হয়েছে।
সংসারের জোয়াল ছিল তার কাঁধে, দিন আনা-দিন খাওয়া। সংসার সামলাতে এই শরীর নিয়ে তাকে কাজ করতে হয়েছে।
সঞ্জুর বয়স যখন প্রায় ২৫ তখনই পেটের ফোলা ভাব চোখে পড়ার মতো বাড়তে শুরু করেছিল। পরিবারের অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রিগোজিনের পরিকল্পনা জানত যুক্তরাষ্ট্র
সঞ্জু নিজেও অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু ভেবেই পাচ্ছিলেন না, যেখানে তিনি রোজ পুষ্টিকর খাবারই খেতে পারেন না সেখানে তার শরীরে এত মেদ জমছে কোথা থেকে।
এভাবেই আরও ১০ বছর কেটে যায়। হঠাৎ এক দিন সঞ্জু বুঝতে পারলেন তার শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। তখন চিকিৎসকের কাছে যান।
মুম্বইয়ের হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রথমে তাকে দেখে ভেবেছিলেন, তার পেটের ভেতরে টিউমার হয়েছে। কিন্তু সেই ধারণা কতটা ভুল তা তারা জানতে পারলেন অস্ত্রোপচারের টেবলে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলিতে হতাহত ১৭
যে চিকিৎসকের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার চলছিল, তিনি সঞ্জুর পেটের হাত দিয়ে প্রথমে বলেন, ভেতরে প্রচুর হাড়গোড় রয়েছে। প্রথমে একটি পা বেরিয়ে আসে, তার পর আরও একটি পা। শরীরে আরও কিছু অংশও হাতে উঠে আসে তার। এর পর একে একে চিকিৎসক বের করে আনেন চুলের কিছু অংশ, পায়ের কিছু অংশ, চোয়াল, গলা, হাড়গোড়।
অপরেশন থিয়েটারে সেই সময় যারা ছিলেন, তারাও নাকি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এক চিকিৎসক সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেছেন, আমরা সেই সময় বুঝতেই পারছিলাম না কী করব। একই সঙ্গে আতঙ্ক আর বিস্ময় ঘিরে রেখেছিল আমাদের।
পরে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন এটি আসলে একটি বিরল ঘটনা। যেখানে মায়ের গর্ভে একটি ভ্রূণের ভেতরে আরও একটি ভ্রূণ জন্ম নেয়।
আরও পড়ুন: ভারতকে বুকে টানছে যুক্তরাষ্ট্র?
চিকিৎসাশাস্ত্রে এই ধরনের ঘটনাকে ‘ফিটাস ইন ফিটু’ বলা হয়। যেখানে মা যমজ সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু এক সন্তানের ভেতরেই জন্ম নেয় আর একজন।
একজন স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও অন্য জন তার ভেতরে পরজীবীর মতো বাড়তে থাকে এ ক্ষেত্রে। সাধারণত যার শরীরের ভেতরে এ সব হচ্ছে, তিনি ধীরে ধীরে বিষয়টি টের পান।
চিকিৎসকরা আরও জানান, সঞ্জু তার শরীর থেকে বেরনো যমজ ভাইয়ের দেহ দেখতে চাননি। সেই সমস্ত অগঠিত হাড়গোড়, মাংসপিণ্ডের দিকে ফিরেও তাকাননি তিনি।
আরও পড়ুন: ওয়াগনারকে দমনের ঘোষণা দিলেন রমজান
নাগপুরের বাড়িতে তার পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করছেন সঞ্জু । কিন্তু এখনও তাকে ‘প্রেগন্যান্ট ম্যান’ বা গর্ভবান পুরুষ বলেই চিনেন আশপাশের সবাই। তথ্যসূত্র আনন্দবাজার।
সান নিউজ/এইচএন