আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি রাশিয়া থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে কেনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রথম চালানের দাম চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করেছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন : সাবেক আইএসআই প্রধান গ্রেফতার
এটি পাকিস্তান সরকারের জন্য বেশ বড় একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। কারণ এর আগে দেশটি তেল কেনার জন্য মার্কিন ডলার ব্যবহার করতো। রাশিয়া থেকে ছাড়ে জ্বালানি ক্রয় পাকিস্তানের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক।
আরও পড়ুন : ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি খুঁজে বের করব
পাকিস্তান এখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ঘাটতির ফলে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের নিয়ন্ত্রিত আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এ বছরের প্রথম দিকে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে হ্রাসকৃত দামে তেল কেনা নিয়ে চুক্তি হয়।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে মর্যাদাপূর্ণ
রোববার (১২ জুন) সেই চুক্তির আওতায় তেলের প্রথম কার্গো করাচিতে পৌঁছায়।
ডলারে নয়, কেন চীনা মুদ্রায়?
পাকিস্তানই একমাত্র দেশ নয়, যারা চীনা মুদ্রায় বাণিজ্য করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশও একটি রুশ প্রকল্পের জন্য ডলারের পরিবর্তে চীনা ইউয়ানে অর্থ প্রদান করার বিষয়ে ভাবছে।
জানা গেছে, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়াকে চীনা মুদ্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার দেবার পরিকল্পনার করা হচ্ছে।
মূলত ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন শুরু করার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন : টোঙ্গায় ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প
ভারত রুপী ব্যবহার করে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনার আপ্রাণ চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি।
বর্তমানে ভারতের অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। তবে এ সরবরাহ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ রাশিয়াকে যে পন্থায় অর্থ প্রদান করতে হবে, সেটা নিষিদ্ধ করেছে আমেরিকা।
আরও পড়ুন : কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ১৫
ভারতকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে রাশিয়াকে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ১ বছর ধরে এই অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
ভারতের আশঙ্কা, তারা যদি অর্থ পরিশোধ করে তাহলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়াও রুপিতে পেমেন্ট নিতে প্রস্তুত নয়।
রুপি দিয়ে তেল কেনা জন্য ভারতীয় ব্যাংকগুলো রাশিয়ার ব্যাংকগুলোতে ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। সমস্যা হলো, ভারতের কাছে তেল বিক্রয় বাড়ানোর পর রাশিয়া অনেক রুপি পেয়েছে। রাশিয়া এখন রুপির পেমেন্টে আগ্রহী নয়।
আরও পড়ুন : যথাসময়ে নির্বাচন হবে
তবে ইউয়ান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ রাশিয়া ক্রমাগত চীনের সাথে ব্যবসা করে আসছে।
লাভবান হচ্ছে পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়া এখন তার তেলের গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সরিয়ে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে চীন ও ভারতই দেশটির তেলের প্রধান ক্রেতা। এবার তার সাথে যুক্ত হলো পাকিস্তানও।
পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র ইসলামাবাদ। এদিকে ঐতিহাসিকভাবেই প্রতিবেশী দেশ ভারতও মস্কোর মিত্র।
এরই মধ্যে অপরিশোধিত তেলের এ চুক্তি তুমুল অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন : বিদ্যুৎশূন্য গুজরাটের ১ হাজার গ্রাম
বিশেষজ্ঞ অতুল ভারতদ্বোয়াজ বলেছেন, ডি-ডলারাইজেশন যে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে রাশিয়া ও চীন, এটা সফলও হতে পারে। চীনের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এই মুদ্রা ব্যবহৃতও হবে।
রাশিয়া ভারতের সাথে যেরকম সম্পর্ক ভালো রাখতে চায়, তেমনি পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাইছে। এসব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া একটা শক্ত অবস্থানেই থাকবে।
আরও পড়ুন : সৌদি পৌঁছেছেন ৮৬১৯৯ হজযাত্রী
চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া, আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে পণ্য বিনিময় বাণিজ্য পদ্ধতি শুরুর একটি অবকাঠামো দাঁড় করিয়েছে ইসলামাবাদ। এটিকেও ডলারবিহীন পণ্য কেনা-বেচার আরেকটি পথ খোলার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসব পদ্ধতির মাধ্যমে পাকিস্তান পশ্চিম থেকে পূর্বে নির্ভরশীল হতে পারে।
পাকিস্তানের চুক্তিতে কী বলা হয়েছে?
টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক চুক্তির বিস্তারিত জানিয়েছেন। তবে পাকিস্তান তেলের দাম ও কী পরিমাণ ছাড় পেয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
মোসাদ্দেক মালিক বলেন, তেলের মূল্য চীনা ইউয়ানে পরিশোধ করা হয়েছে। পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম সরকারি পর্যায়ের এ চুক্তির আওতায় মোট ১ লাখ টন অপরিশোধিত তেল কেনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : কাশ্মিরে সেনা অভিযান, নিহত ৫
এপ্রিলে এই চুক্তিটি করেছে পাকিস্তান। এপ্রিলে দেওয়া এই ক্রয়াদেশের মধ্যে ৪৫ হাজার টন তেল করাচি বন্দরে পৌঁছে এবং বাকিটা আসছে। পাকিস্তান’স রিফাইনারি লিমিটেড (পিআরএল) প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করবে।
আমাদের লক্ষ্য হলো এক-তৃতীয়াংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের বেশির ভাগ অপরিশোধিত তেল সৌদি আরব এবং পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়।
সূত্র : বিবিসি
সান নিউজ/এনজে/এইচএন