আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডায় তীব্র দাবানলের ফলে বাতাসের মান খারাপ হওয়ায় উত্তর আমেরিকার অধিবাসিদের ঘরের বাইরে থাকা সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : ভারতে ৫৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) থেকে নিউইয়র্কে বিনা পয়সায় মাস্ক বিতরণ করা শুরু হবে।
কানাডা জানিয়েছে, মানুষ যদি ঘরে থাকতে না পারে এবং বাইরে বের হয়, তাহলে তাদের মাস্ক পরা উচিত।
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিপজ্জনক এ ধোঁয়াটে অবস্থা পুরো সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। বেশিরভাগ ধোঁয়া আসছে কুইবেক থেকে। সেখানে ১৫০ টির বেশি আগুন জ্বলছে।
আরও পড়ুন : অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
বুধবার (৭ জুন) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রদেশটির ১৫ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এটা কুইবেকের সবচেয়ে খারাপ আগুনের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল জানান, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করা হবে। এটা একটা সাময়িক অবস্থা। এটা কোভিড নয়।
গভর্নর আরও জানান, নিউইয়র্ক শহরের বাস এবং ট্রেনে উচ্চ মানসম্পন্ন বাতাস পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে, যার কারণে এগুলো নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন : রাজবাড়ীতে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ
কানাডার পরিবেশ বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার টরেন্টোর অবস্থা আরও খারাপ হবে। কারণ আরও বেশি ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে। সংস্থাটি বুধবার এক বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিনে বাইরে থাকা সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ক্ষুদ্র উপাদানগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। শ্বাসযন্ত্রগুলো দাবানলের ধোঁয়ায় থাকা গ্যাসের সংস্পর্শে আসা কমায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা এরই মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাতাসের মানকে শ্বাসযন্ত্রের রোগে ভুগছেন এমন বাসিন্দাদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ দূষিত বাতাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন : রাজধানীতে ২ শিশুর মৃত্যু কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যান গ্রেফতার
নিউইয়র্কে কমলা রঙের কুয়াশা আকাশসীমাকে ঢেকে দিয়েছে। এতে ঢেকে গেছে স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোও।
বুধবার মেয়র এরিক অ্যাডামস জানান, আমরা সব নিউইয়র্কবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে যতটা সম্ভব বাইরের কাজকর্ম কমিয়ে ফেলেন।
শহরটির চিড়িয়াখানায় পশুদেরকে ঘরের মধ্যে আনা হয়েছে এবং ঘোড়ায় টানা গাড়ির চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসির স্কুলগুলোতে সব ধরনের বাইরের কর্মকাণ্ড বাতিল করা হয়েছে এবং সেখানে বাতাসের মান ‘কোড রেড’ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : এসি ছাড়াই ঘর ঠান্ডা রাখুন
এদিকে ডেট্রইট হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম মেট্রোপলিটন শহর, যার বাতাসের মান খুবই খারাপ। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা মানুষকে বাইরে শরীরচর্চা করতে নিষেধ করেছে। সেই সাথে যত কম সম্ভব ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ এ ধোঁয়া তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
কানাডার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটিতে সবচেয়ে খারাপ দাবানলের মৌসুম রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে তুলনামূলক বেশি গরম ও শুষ্ক বসন্তকালকে দায়ী করছেন। এ অবস্থা গ্রীষ্মকাল জুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে আগুনে কানাডায় ৩.৮ মিটার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে, যা বছরের এ সময়ে গত ১০ বছরে হওয়া গড় দাবানলের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।
বুধবার হোয়াইট হাউস জানায়, দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৬০০’র বেশি অগ্নিনির্বাপন কর্মীকে কানাডায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : বিশ্ব মহাসাগর দিবস
জলবায়ু পরিবর্তন গরম, শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা দাবানলকে আরও তীব্র করবে। শিল্পযুগের তুলনায় এরই মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বিশ্ব জুড়ে সরকার প্রধানরা কার্বন নিঃসরণের হার না কমালে এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে কানাডায় দাবানলের কারণে সীমিত দৃষ্টিসীমা তৈরি হওয়ায় নিউইয়র্কের প্রধান প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট বিলম্বিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া এবং পাশের নেওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হতে পারে।
ফ্লাইট অ্যাওয়ারের তথ্যমতে, নিউইয়র্ক সিটি এয়ারপোর্টে প্রায় ৮০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ২ দেশেই লাখ লাখ মানুষ বাতাসের মান সম্পর্কিত হুঁশিয়ারির আওতায় রয়েছে।
আরও পড়ুন : পরিবেশ এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে
অবশ্য বিমান চলাচল বিলম্বিত করার আরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আটলান্টা থেকে হিউস্টনের ফ্লাইটও বিলম্বিত হয়েছে। একই সাথে ফিলাডেলফিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের আগমনী ফ্লাইটও বিলম্বিত হয়েছে। টরেন্টোর পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টেরও প্রায় ২৫০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
নিউইর্য়ক শহরের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর যাত্রীদের বলেছে, আবহাওয়ার খারাপ অবস্থা এডিএ বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওপর প্রভাব ফেলেছে। আপনার ফ্লাইটের অবস্থা জানতে আপনার এয়ারলাইনের সাথে কথা বলুন।
আরও পড়ুন : ‘বিপর্যয়’ আরও শক্তিশালী হবে
কানাডার দমকলবাহিনী দেশ জুড়ে শুরু হওয়া ৪০০ টির মতো দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পাচ্ছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং পূর্ব উপকূল ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে গেছে। কুয়াশা নিউয়র্ক সিটির বিখ্যাত আকাশসীমাকে ঢেকে দিয়েছে। এটি মঙ্গলগ্রহ ও পৃথিবীর ধ্বংস পরবর্তী কল্পিত দৃশ্যের মতো অবস্থা তৈরি করেছে।
২ দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাই বাতাসের মান ও দূষণ নিয়ে হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবানলের ধোঁয়া দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সেন্টার অব আরবান এনভায়রনমেন্ট নামে একটি সংস্থার পরিচালক এবং ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অধ্যাপক ম্যাথিউ অ্যাডামস জানিয়েছেন, দাবানলের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক ভাবে শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, বুক ব্যথা কিংবা চোখ, নাক এবং গলায় জ্বালাপোড়া হতে পারে।
আরও পড়ুন : বঙ্গোপসাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
অধ্যাপক অ্যাডামস জানান, বাতাসের এ দূষণের সময়টাতে আমরা হাসপাতালে রোগীর ভিড় দেখবো। যারা এ সময়ে হাসপাতালে আসবে তাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা থাকবে। কিন্তু দাবানলের ধোঁয়ায় আরও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যেমন- ক্যান্সার বা ফুসফুসের রোগ, বিশেষ করে যারা ঐ এলাকার বাসিন্দা এবং প্রায়ই দাবানলের শিকার হয়।
এছাড়া ধোঁয়ার কুয়াশায় যে ক্ষুদ্র কণা থাকে সেগুলোর মাধ্যমেই এ সমস্যা তৈরি হয় বলে জানান তিনি। এটি রক্তস্রোত ও দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গে মিশে যায়। এর কারণে ডিএনএ-তে পরিবর্তন হয় ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
অধ্যাপক আরও বলেন, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে দাবানলের আগুনের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলে, তা গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভের সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
খবর : বিবিসি বাংলা
সান নিউজ/এনজে