আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক বাহিনীর একটি অংশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা পদত্যাগ করেছেন।
টেলিভিশন ভাষণে তিনি সরকার ও পার্লামেন্ট বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
‘আমাকে ক্ষমতায় রাখতে কোনোরকম রক্তপাত হোক, সেটা আমি চাই না’- বলেছেন তিনি।
এর আগে তাকে ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বোউবোউ সিসেকে আটক করে রাজধানী বামাকোর একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যান বিদ্রোহী সৈনিকরা, যার নিন্দা জানিয়েছে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ও ফ্রান্স।
‘যদি আজ আমাদের সেনাবাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজেদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাপ্তি টানতে চায়, আমার সামনে কি সত্যিই আর কোন বিকল্প আছে?-' বলেন ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা।
এর আগে বিদ্রোহী সৈন্যরা রাজধানী বামাকো থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের সামরিক ঘাঁটি কাটি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।
মালির সৈন্যদের মধ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ এবং জিহাদিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সেই সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্টের ওপরেও অনেকে সন্তুষ্ট নন।
২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হন কেইতা। কিন্তু দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তার ওপর অনেকের ক্ষোভ তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে বেশ কয়েকবার বড় ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির রক্ষণশীল মুসলমান ইমাম মাহমুদ ডিকো নেতৃত্বাধীন নতুন একটি জোট দেশে সংস্কারের দাবি তুলেছে। কেইতা যৌথ সরকার গঠনসহ নানা প্রস্তাব দিলেও তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মালির কাটি সামরিক ঘাঁটির ডেপুটি কমান্ডার কর্নেল মারিক ডিয়াউ ও জেনারেল সাদিও কামারা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে বামাকো থেকে জানিয়েছেন বিবিসি আফ্রিকান সার্ভিসের সাংবাদিক আবদাউল বা।
বামাকো থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এই সামরিক ঘাঁটির দখল নেওয়ার পর বিদ্রোহী সৈনিকরা রাজধানীতে চলে আসেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কেইতার পদত্যাগের দাবিতে জমায়েত হওয়া লোকজন তাদের স্বাগত জানাযন।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) দুপুরের পর তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে থাকা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী- দুইজনকেই গ্রেপ্তার করেন।
প্রেসিডেন্টের ছেলে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তবে এই বিদ্রোহে দেশটির কতো সৈনিক অংশ নিয়েছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
২০১২ সালেও কাটি সামরিক ঘাঁটিতে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল, যখন জিহাদিদের ঠেকাতে সিনিয়র কমান্ডারদের ব্যর্থতা আর উত্তর মালিতে তুয়ারেগে বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন সৈনিকরা।
বিদ্রোহের ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পরে জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছে।
১৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইকোনমিক কম্যুনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস ঘোষণা করেছে যে, তারা মালির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেবে, সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করবে এবং জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে আপাতত মালি বাইরে থাকবে।
মালির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার (১৯ আগস্ট) আলোচনায় বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
মালির ঔপনিবেশিক সাবেক শাসক ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে। সৈনিকদের ব্যারাকে ফিরে যেতে আহবান জানিয়েছে ফ্রান্স।
সান নিউজ/ এআর