ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
চীনের কাছে গোপন তথ্য বিক্রির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ আগস্ট) মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, আলেক্সান্ডার ইয়োক চিং মা (৬৭) নামের এই সাবেক গোয়েন্দা বেশ কয়েক বছর ধরে এ কাজে যুক্ত ছিলেন। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র এক স্টিং অপারেশনে গত শুক্রবার (১৪ আগস্ট) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, আলেক্সান্ডার ইয়োক চিং মা’র বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, আরেক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তথ্য বিক্রির বিনিময়ে লাখ লাখ ডলার ও উপহার গ্রহণ করেন চিং মা। তবে ষড়যন্ত্রে যুক্ত ৮৭ বছর বয়স্ক আরেক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা মারাত্মক অসুস্থ হওয়ায় এই মুহূর্তে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তার পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি।
আদালতে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের মার্চ মাসে তথ্য বিক্রির ওই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ওই সময়ে অভিযুক্ত দুই সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা হংকংয়ের একটি হোটেল কক্ষে তিনদিন ধরে চীনের পাঁচ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে সাবেক কর্মকর্তারা চীনা গোয়েন্দাদের কাছে সিআইএ’র অভিযানসহ এর কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা গোপন পরিচয়ও সরবরাহ করেন।
মার্কিন বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, হংকংয়ের হোটেল কক্ষের ওই বৈঠকের অংশ বিশেষ ভিডিও রেকর্ড করে রাখা হয়। তার একটি অংশে দেখা গেছে, গোপন তথ্য সরবরাহের বিনিময়ে আলেক্সান্ডার ইয়োক চিং মা ৫০ হাজার ডলার গুণে নিচ্ছেন। তবে ওই ভিডিও কিভাবে মার্কিন তদন্তকারীদের হাতে পৌঁছেছে সে সম্পর্কে ওই বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
হংকংয়ে জন্ম নেওয়া আলেক্সান্ডার ইয়োক চিং মা ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে চলে যান। সেখানেই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ১৯৮২ সালে সিআইএ’তে যোগ দেন। গোপনীয়তার সর্বোচ্চ ছাড়পত্র নিয়েই সংস্থাটিতে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে গোয়েন্দা সংস্থাটি থেকে অবসর নেন তিনি। পরে তিনি চলে যান সাংহাইতে। সেখানে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। মার্কিন তদন্তকারীদের অভিযোগ সেখানেই তিনি চীনের গোয়েন্দাদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে আবারও হাওয়াই ফিরে যান।
মার্কিন বিচার বিভাগের তথ্য অনুসারে, হাওয়াই ফিরে যাওয়ার পর সেখানকার এফবিআই কার্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক ভাষাবিদ হিসেবে কাজের আবেদন করেন। কাজ পাওয়ার পর বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা ও অনুবাদের কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালের এপ্রিলে প্রিপেইড কলিং কার্ড ব্যবহার করে তিনি চীনা নিয়োগকারীদের এফবিআইএ কাজ পাওয়ার তথ্য জানান বলে অভিযোগ মার্কিন তদন্তকারীদের।
মার্কিন বিচার বিভাগের অভিযোগ, ‘পরবর্তী ছয় বছর ধরে চিং মা নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন হিসেবে শ্রেণীভুক্ত বিভিন্ন নথির ছবি তুলেছেন, কিংবা চুরি করে কপি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্য নানা অস্ত্র প্রযুক্তির তথ্য সিডিতে সংগ্রহ করেছেন। পরে বিভিন্ন সময়ে চীন ভ্রমণের সময় এসব তথ্য সঙ্গে করে নিয়ে গোয়েন্দাদের সরবরাহ করেছেন বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, চীন থেকে প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় সঙ্গে করে হাজার হাজার ডলার এবং দামী উপহার নিয়ে যেতেন।
মার্কিন বিচার বিভাগের দাবি, ২০১৯ সালে এফবিআইএ’র একজন আন্ডার কাভার এজেন্ট চীনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে চিং মার কাছে যান। পূর্বে সহায়তার ছোট প্রশংসা হিসেবে ওই এজেন্ট তাকে দুই হাজার ডলার প্রদান করেন। পরে আবারও চীনের গোয়েন্দাদের জন্য কাজ করতে রাজি হয়ে যান তিনি। গত সপ্তাহে নতুন বৈঠকে চিং মা ওই এফবিআই এজেন্টের কাছ থেকে আরও অর্থ গ্রহণ করেন আর চীন সরকারকে সহায়তা করার ইচ্ছা পোষণ করেন বলে অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, ‘ওই বৈঠকে চিং মা বলেন তিনি চান তার মাতৃভূমি সফল হোক।’
সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা আলেক্সান্ডার ইয়োক চিং মাকে আগামী মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) হনলুলুর একটি আদালতে হাজির করা হবে। তার বিরুদ্ধে বিদেশি সরকারকে সহায়তা করতে জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবণ কারাদণ্ড হতে পারে তার।
সান নিউজ/ এআর