আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক দশক ধরে চলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।
আরও পড়ুন: শিগগিরই পাল্টা আক্রমণ শুরু
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় মিত্রদের একজন। শুক্রবার (২৬ মে) বার্তাসংস্থা রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ’র বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ কয়েক দশক ধরে চলতে পারে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের পর দীর্ঘসময় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষস্থানীয় এই মিত্র ভিয়েতনাম সফরের সময় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ ওই মন্তব্য করেন।
অবশ্য রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রায়শই কঠোর নানা মন্তব্য করে থাকেন। এমনকি গত মাসে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষকে সংক্রমণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন তিনি। এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়া হারলে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এই পুতিন মিত্র।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় হামলায় ৭০ বিদ্রোহী নিহত
ভিয়েতনাম সফরের সময় দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘এই সংঘাত খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, সম্ভবত কয়েক দশক।’
ইউক্রেন নাৎসি রাষ্ট্র বলে মস্কোর দাবির পুনরাবৃত্তি করে রাশিয়ার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যতদিন দেশটিতে এই ধরনের (সরকার) ক্ষমতায় থাকবে, সেখানে দেখা যাবে তিন বছরের যুদ্ধবিরতির পর দুই বছর ধরে সংঘাত হচ্ছে এবং এগুলোর সবকিছুরই বার বার পুনরাবৃত্তি হবে।’
এর আগে গত জানুয়ারিতে মেদভেদেভ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া পরাজিত হলে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে তার দেশ। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ সেসময় বলেন, ‘পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো বড় ধরনের সংঘাতে কখনই হারেনি। কারণ এর ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করে।’
এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক ওয়ারহেডের দখল রয়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে রয়েছে।
রাশিয়ার ওপর প্রচলিত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ন্যাটোর থাকলেও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসেবে ইউরোপের জোটের তুলনায় মস্কোর পারমাণবিক শক্তি বেশি রয়েছে।
আরও পড়ুন: চীন-রাশিয়াকে দমাতেই জি-৭ সম্মেলন
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয়ে থাকে দিমিত্রি মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেদভেদেভ রাশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির চেহারা। নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি।
সান নিউজ/এনকে