আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত চারদিনের জাতিগত দাঙ্গায় ৫৪ জন নিহত হয়েছে। দাঙ্গা প্রশমণে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন : ফসফরাস বোমা হামলার অভিযোগ
শনিবার (৬ মে) এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের সহিংসতায় রাজ্যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয় চূড়াচাঁদপুর জেলায় এবং ১৫ জনের মৃত্যু পূর্ব ইম্ফল জেলায়। পশ্চিম ইম্ফলে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।
তারা আরও জানিয়েছেন, শনিবার রাজধানী ইম্ফলের পরিস্থিতি খানিকটআ নিয়ন্ত্রণে এলেও রাজধানীর আশপাশ ও দূরবর্তী এলাকাগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে এখনও সংঘাত চলছে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি বজায় রাখতে আরও বেশি সংখ্যক সেনা পাঠানো হয়েছে রাজ্যে। বর্তমানে ভারতীয় সেনা এবং অসাম রাইফেলসের প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকেই অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যে রাজতন্ত্রবিরোধীদের বিক্ষোভ
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও মণিপুরের স্থানীয় সংভাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তিন দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার সকালে ইম্ফলের বেশিরভাগ দোকান ও বাজার খুলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারাও অন্যান্য দিনের মতো এ দিন সকাল থেকে নিত্যপ্রায়েজনীয় পণ্যদ্রব্য কেনা-বেচা করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নিহত ৫৪ জনের মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ পূর্ব ইম্ফলের জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস হাসাপতালের মর্গে এবং ১৬ জনের মৃতদেহ চারুচন্দ্রপুর জেলা হাসাপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বাকি ২৩ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে পশ্চিম ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতালের মর্গে।
এর বাইরে রাজ্যের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র পাহাড়ি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাত চলছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের। গত চার দিনে এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫ জন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই জন সেনাসদস্য।
আরও পড়ুন : অবশেষে রাজমুকুট চার্লসের মাথায়
পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করেন যে আদিবাসীরা, তাদের একটা বড় অংশ মূলত নাগা, কুকি, চিনসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ। বিভিন্ন জনজাতি অধ্যূষিত রাজ্য মনিপুরের সংখ্যাগুরু জাতিগোষ্ঠী মেইতেই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তফসিলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বসবাস মূলত ইম্ফল উপত্যকায়।
মেইতেইরা যদি তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান, সেক্ষেত্রে রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষজন বঞ্চিত হবেন—এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গত ৩ মে, মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে বলে। বুধবার হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরপরই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করে, আর সেই থেকেই সূত্রপাত এই জাতিগত দাঙ্গার।
সান নিউজ/জেএইচ