ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সমঝোতায় পৌঁছানোয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান ও তুরস্ক। ইরান বলছে, এই সমঝোতা আবু ধাবির কৌশলগত নির্বুদ্ধিতা। আর তুরস্ক বলেছে, আমিরাতের এই ভন্ডামি কোনও দিনও ক্ষমা পাবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার ঘোষণার পর ইসরায়েল এখন পর্যন্ত তিনটি আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সমঝোতায় পৌঁছেছে। ১৯৭৯ সালে মিসর ও ১৯৯৪ সালে জর্ডানের পর বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা জানানো হয়।
এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমঝোতায় পৌঁছানোর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও ট্রাম্প এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই বিরাট ঐতিহাসিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির অগ্রগতিকে এগিয়ে নেবে বলে বিশ্বাস করেন তারা। তবে ওই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
ওয়াশিংটনের মধ্যস্ততায় ইসরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাত চুক্তিকে দেশ দুইটির কৌশলগত নির্বুদ্ধিতা আখ্যা দিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বি ইরানের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণ ও সব মুসলমানের পিঠে অন্যায়ভাবে ছুরি চালিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।’ শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা আল-আকসা মসজিদ মুক্ত করার লক্ষ্যে গত সাত দশক ধরে যে প্রতিরোধ সংগ্রাম চলে আসছে, তা আজ হোক কিংবা কাল ইসরায়েলসহ তার অপরাধের সকল সহযোগীকে একসঙ্গে গ্রাস করবে।
ইসরায়েলকে অবৈধ ও মানবতাবিরোধী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে ইরানি বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত চরম বিপজ্জনক কাজ করেছে। এই ঘটনার জের ধরে পারস্য উপসাগরে সম্ভাব্য যে কোনো পরিণতির জন্য আবুধাবিসহ এ অঞ্চলে তার সহযোগী সরকারগুলোকে দায়ী থাকতে হবে।
ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির পরিণতিতে পরিণতিতে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ অক্ষ আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করে ইরানের বিবৃতিতে বলা হয়, ইহুদিবাদী ইসরায়েল ও তার তাবেদার আরব শাসকদের বিরুদ্ধে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে জনগণের ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী হবে।
এদিকে কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখলেও গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেকে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করলে এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক ওই প্রস্তাব কখনোই মেনে নেবে না। আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনি ইস্যুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই কুটিলের আচরণের কথা ইতিহাস এবং এই অঞ্চলের মানুষের বিবেক কখনোই ভুলে যাবে না আর ক্ষমাও করবে না।
শুক্রবারের এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে বিশ্বাসঘাতকতা করেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একে ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মত্যাগ করার মতো কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে।’