ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
কাশ্মির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বিশেষ বৈঠক আহ্বান করতে রিয়াদের ওপর চাপ প্রয়োগের পর পাকিস্তানে ঋণ এবং তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি যুবরাজের পাকিস্তান সফরের সময়ে ৬২০ কোটি ডলারের ঋণ ও তেল সরবরাহের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ওআইসি’র পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠক ডাকতে ইসলামাবাদ রিয়াদের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে ওই চুক্তি বাতিলের কথা জানায় সৌদি আরব। আর এর মধ্য দিয়ে এই দুই পুরনো মিত্রের সম্পর্কের অবনতির নতুন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে গিয়ে মোট ৬২০ কোটি ডলারের ঋণ ও তেল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে তিনশ’ কোটি ডলারের ঋণ এবং বাকি ৩২০ কোটি ডলারের তেল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের মতবিরোধের জেরে গত সপ্তাহে অপর একটি ঋণের একশ’ কোটি ডলার সৌদি আরবকে পরিশোধে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দাবি, গত বছর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের স্বায়ত্ত্বশাসন কেড়ে নেওয়ার পরিবর্তে ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক আহ্বান করুক সৌদি আরব। তবে তাতে সাড়া দেয়নি রিয়াদ। তারপরও কাশ্মিরিদের সহায়তায় ওআইসি’কে ব্যবহার করতে মরিয়া প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে পাকিস্তান।
গত সপ্তাহে নিজ দেশের টেলিভিশন চ্যানেল এআরআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, ‘আমি আবারও শ্রদ্ধার সঙ্গে ওআইসি’কে বলছি পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের একটি বৈঠক আমাদের প্রত্যাশা।’ তবে তা না হলে পাকিস্তান এই দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন বলে জানান তিনি।
কোরেশি বলেন, আপনারা এটি আহ্বান করতে না পারলে আমি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইসলামিক দেশগুলোর যারা কাশ্মির ইস্যুতে এবং নিপীড়িত কাশ্মিরিদের সমর্থনে আমাদের পাশে দাঁড়াতে তৈরি আছে তাদের নিয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করতে বলতে বাধ্য হবো।’
সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রাধান্যশীল সংস্থা ওআইসি’কে অবশ্যই কাশ্মির ইস্যুতে নেতৃত্ব দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন শাহ মাহমুদ কোরেশি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের স্পর্শকাতরতা প্রকাশ করেছি। আপনাদের এটা বুঝতে হবে। উপসাগরীয় দেশগুলোর এটা বোঝা উচিত। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও কাশ্মির ইস্যুতে চুপ থাকতে পারবেন না বলে জানান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে আর্থিক, বাণিজ্যিক এবং সামরিক খাতে সৌদি আরবের দ্বিপাক্ষিক ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে দেশ দুটির মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগে পড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের জন্যই এই উদ্বেগ।