ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মাইকেল আউন। বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় জনবিক্ষোভের মুখে সোমবার (১০ আগস্ট) রাতে পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগে সন্ধ্যায় জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হাসান দিয়াব নিজ দেশে দুর্নীতির মারাত্মক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে নেন। দাবি করেন, তার সরকার ‘দেশ রক্ষার পথরেখা চিহ্নিত করার কাজে’ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। পরবর্তী সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত তাকেই অন্তবর্তী সরকার পরিচালনা করতে বলেছেন লেবাননের রাষ্ট্রপতি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সোমবার টানা তৃতীয় দিন রাজপথে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে লেবাননের বিক্ষোভকারীরা। অনেকেই মনে করেন, মজুদকৃত দুই হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও দুর্নীতি। গত কয়েক দিন ধরেই মুখে লেবাননের পতাকা রঙের মাস্ক পরে বিক্ষোভকারীরা দিকে দিকে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া শুরু করে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়া হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন সরকারি অফিসে।
রাজপথে এমন পরিস্থিতির মুখে সোমবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। কয়েক মাসের অচলাবস্থার পর গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়া দিয়াব বলেন, তার সরকার দেশরক্ষায় চেষ্টায় অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রের চেয়েও লেবাননের দুর্নীতিবাজরা বেশি শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘পরিবর্তন থেকে আমাদের আলাদা করে রেখেছে খুবই নিবিড় এবং কণ্টকাকীর্ণ একটি দেয়াল; সেই দেয়ালের সুরক্ষা দিতে এবং নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে একটি শ্রেণী সব ধরণের নোংরা উপায় অবলম্বন করছে।’
ওই দুর্নীতিবাজ শ্রেণীর প্রতি ইঙ্গিত করে হাসান দিয়াব বলেন, ‘তারা জানে আমরা তাদের ওপর হুমকি তৈরি করেছি আর এই সরকারের সফলতার অর্থ হলো দীর্ঘ দিনের এই শাসক শ্রেণীর সত্যিকার পরিবর্তন, যাদের দুর্নীতি এই দেশের শ্বাসরোধ করে ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমরা মানুষের দাবির মুখে সাত বছর ধরে (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) লুকিয়ে রেখে এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জনদাবির প্রতি সম্মান দেখাচ্ছি এবং তাদের সত্যিকার পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করছি।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজের ভাষণে দুর্নীতির সমস্যাকে বহু পুরনো আখ্যা দিয়ে নিজেকে সংস্কারকামী নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন হাসান দিয়াব।
হাসান দিয়াবের পদত্যাগের পর এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে লেবাননের পার্লামেন্ট। দেশটির প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সরকার গঠনের বিধান রয়েছে। আর এই বিধানের কারণেই গত প্রায় দুই বছর ধরে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।
২০১৮ সালের মে মাসে লেবাননে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রায় ৯ মাস রাজনৈতিক দোলাচলের পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনে সক্ষম হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মাথায় কর আরোপ প্রস্তাব, অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভের মুখে অক্টোবর মাসে পদত্যাগ করেন তিনি। আরও কয়েক মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর এই বছরের জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠন করেন হাসান দিয়াব।
সান নিউজ/ বি.এম.