ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনে এবার নিজেদের জয়ী ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।
গেলো বছরের নভেম্বর থেকে অস্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মাহিন্দা।
২২৫ আসনের মধ্যে ১৪৫টিতে আসনে জয়ী হয়ে বিশাল জয় পায় শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট। তাদের মিত্ররা পেয়েছে আরো ৫টি আসন।
এর আগে মাহিন্দা রাজাপাকসে টুইটে জানান, বিজয়ের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে কল করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিতর্কিত রাজাপাকসে পরিবার গেলো ২ দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহের দলের ভরাডুবি হয়েছে। বিদায়ী পার্লামেন্টে তাদের ১০৬টি আসনে জয় থাকলেও এবারের নির্বাচনে সবগুলো আসনে হেরেছে বিক্রমাসিংহের দল।
পার্লামেন্টে নতুন বিরোধীদল গঠন করা হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। ১৯৯৩ সালে প্রেমাদাসা গুপ্ত হত্যার শিকার হন।
করোনা মহামারীর মধ্যে যে কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে শ্রীলঙ্কা তার মধ্যে একটি। দেশটিতে ভাইরাসের কারণে দু'দফা ভোট গ্রহণ পেছানোও হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯ জন। মারা গেছে ১১ জন।
বিশ্লেষকরা পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে রাজাপাকসে ভাইদের আরেকটি বিশাল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মাত্র ৯ মাস আগে বিস্ময়করভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টকে নেতৃত্ব দিয়ে পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয় তুলে নিলেন।
রাজাপাকসে সিনহালাদের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয়। ২০০৯ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে বিচ্ছিন্ন তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন চালান তিনি। এ কারণে সিনহালাদের কাছে এতো কদর তার।
অনেকে দেশটিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং সফলতার সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য গোতাবায়া প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
গোতাবায়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন। এ অভিযোগ তিনি সবসময়ই অস্বীকার করে আসছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, গোতাবায়া অস্বীকার করলেও সত্য আড়ালের কোনো সুযোগ নেই।
নির্বাচনে সিনহালা জাতীয়তাবাদের যে ঢেউ উঠেছে তা নিয়ে শঙ্কিত সংখ্যালঘুরা, বলছেন বিশ্লেষকরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, তারা এখনো মানসিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। গেলো বছর ইস্টার সানডেতে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পর থেকে তা নতুন করে শুরু হয়। ওই হামলায় ২৬০ জন নিহত হয়। দায় স্বীকার করে তথাকথিত ইসলামি নামধারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাজাপাকসেরা সংবিধান পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে মত বিশ্লেষকদের। বাড়ানো হতে পারে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা। যাতে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা পায়।
সমাজকর্মীরা সতর্ক করেছেন, ক্ষমতার ভারসাম্যের নামে ভিন্নমত দমন, সমালোচনার অধিকার হরন করে কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা হলে শান্তি, স্থিতিশীলতার বদলে সংকট আরো গভীর হবে।
সান নিউজ/ আরএইচ