আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আফগানিস্তানের রুক্ষ-শুষ্ক উত্তরাঞ্চলে নতুন একটি খাল খুঁড়ছে তালেবান, বালির ওপর গর্জন করছে একঝাঁক খননযন্ত্র। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা। তালেবান সরকার বলছে, এই বিশাল প্রকল্পে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ও তিন হাজারের বেশি যন্ত্রপাতি ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
আরও পড়ুন: কঠোর অবস্থানে জেলেনস্কি
কাজ শেষ হলে কোশ টেপা খাল দিয়ে বয়ে যাবে আমু দরিয়া নদীর পানি। একসময় অক্সাস নামে পরিচিত নদীটি আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে সৃষ্টি হয়ে উজবেকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি মধ্য এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘতম নদী। তালেবানের আশা, তাদের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আফগানিস্তানের সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর মরুভূমি সবুজ কৃষিজমিতে পরিণত হবে।
প্রচণ্ড দুঃসময়ের মধ্যে থাকা আফগানিস্তানে শত শত খারাপ খবরের মধ্যে এই প্রকল্পটি তালেবানের প্রশাসনিক সক্ষমতার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষ ভয়াবহ দারিদ্র্যের হুমকিতে রয়েছে। তালেবানের নির্দেশে পড়াশোনা বন্ধ আফগান মেয়েদের।
আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের প্রধান আবদুল রহমান আত্তাশ বলেন, আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু আমরা প্রমাণ করবো, আফগানিস্তান নিজের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে এবং নিজস্বভাবে জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা
কোশ টেপা খাল খনন প্রকল্পটি অবশ্য নতুন নয়। উত্তর আফগানিস্তানে একটি খাল খননের পরিকল্পনা কয়েক দশক ধরে আলোচনায় ছিল। পশ্চিমা-সমর্থিত সাবেক আফগান সরকারের অধীনে এর সম্ভাব্যতা যাচাইও করা হয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে তালেবান প্রশাসনের হাতে প্রকল্পটির অগ্রগতি অসাধারণই দেখাচ্ছে। প্ল্যানেট ল্যাবস, পিবিসির মতো সংস্থাগুলো প্রকাশিত স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ মাসে ১০০ কিলোমিটারের বেশি খাল খনন করা হয়েছে।
তবে দ্রুত কাজ মানেই ভালো কাজ নয়। জার্মানিতে বসবাসরত আফগান প্রকৌশলী নাজিবুল্লাহ সাদিদের শঙ্কা, খালটি ঠিকভাবে আচ্ছাদিত হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে, এর বেশিরভাগ পানি ওই অঞ্চলের শুষ্ক, বালুকাময় মাটি শুষে নেবে। তাছাড়া খাল তৈরির প্রকল্পে খননের অংশটিই সবচেয়ে সহজ। এরপরে আসন্ন কালভার্ট, সেতুনির্মাণের মতো জটিল প্রকৌশল কাজগুলো পরিচালনার ক্ষমতা তালেবানের রয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান সাদিদ। তার মতে, তালেবান তাড়াহুড়ো করছে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীটির জন্য এ প্রকল্পে অর্থায়নও সহজ নয়। আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, তারা দেশীয় রাজস্ব থেকে অর্থ জোগাড় করবে। কর পরিহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে তালেবান সরকারের আয় সত্যিই কিছুটা বেড়েছে। তবে তাদের হাতে বিকল্প খুবই সামান্য। বিদেশি দাতারা বিশাল প্রকল্পের জন্য তালেবানের হাতে অর্থ দিতে রাজি নয়।
আরও পড়ুন: বেড়েছে ডিম ও মুরগির দাম
পরিকল্পিত ২৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটিতে প্রথম ধাপে কাজ হবে ১০০ কিলোমিটারের বেশি। এর জন্য ৮২০ কোটি আফগানি (৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার) ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় আট শতাংশের সমতুল্য।
আরেকটি সমস্যা হলো, খালের কাজ শেষ হলে সেটি আঞ্চলিক বিবাদ বাড়িয়ে দিতে পারে। খালটি উজবেকিস্তানের সীমান্তের কাছাকাছি আমু দরিয়া নদী থেকে পানি সরাবে। উজবেকরা তাদের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল তুলার ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই নদীর ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া আফগানিস্তান তার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ আমদানি করে উজবেকিস্তান থেকে। ফলে উজবেকদের রাগিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আপাতত তাদের নেই।
আরও পড়ুন: হোটেল থেকে মা-ছেলের লাশ উদ্ধার
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কাবুলের বাসিন্দারা দিনে মাত্র দুই ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পেয়েছেন। কারণ তাসখন্দ সরকার আফগানিস্তানে রপ্তানি কমিয়ে নিজেদের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে পানি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
সান নিউজ/এসআই