আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের পেশোয়ারের মসজিদে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তালেবানের নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার।
আরও পড়ুন : পাকিস্তানে বোমা হামলা, নিহত বেড়ে ৭২
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ার শহরের একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইমারাতে ইসলামীয়া আফগানিস্তান মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলার নিন্দা করে।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দিবে না যুক্তরাষ্ট্র
এছাড়া এই ধরনের কাজকে ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী বলে মনে করে। আমরা আল্লাহর কাছে নিহতদের জন্য ক্ষমা ও জান্নাত নসিবের পাশাপাশি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আমরা নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ জানুয়ারি) পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের পুলিশ লাইন এলাকার একটি মসজিদে নামাজ চলাকালীন সময়ে শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৭ জনে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) পেশোয়ারের পুলিশ লাইন্স এলাকার একটি মসজিদে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন : ৩৩ আসনে একাই লড়বেন ইমরান
দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তারা জানান, সোমবার পুলিশের দুটি চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করেন হামলাকারী। মসজিদটিতে জোহরের নামাজ চলাকালে সামনের কাতারে ছিলেন তিনি। এদিকে, এ হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)।
পেশোয়ারের পুলিশ কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ হতাহতের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, হামলায় বিধ্বস্ত মসজিদটিতে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। পেশোয়ারজুড়ে হাসপাতালে চিকিৎসা জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এছাড়া রেড জোনমুখী রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, আত্মঘাতী ওই হামলাকারী জোহর নামাজ চলাকালে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েক ডজন মুসল্লি আহন হন। তাদের পেশোয়ারের লেডি রেডিং হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গুলি, নিহত ৮
হাসপাতালটির এক মুখপাত্র বলেছেন, এখনো আহতদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহতদের জন্য রক্ত দিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পেশোয়ারের জেলা প্রশাসক শফি উল্লাহ খান বলেন, আত্মঘাতী হামলায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। সুতরাং নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের উদ্ধার করে লেডি রিডিং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের জন্য রক্ত সহায়তা চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হামলার পরপরই খাইবার পাখতুনখোয়ার অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান পেশোয়ারের সব হাসপাতালে চিকিৎসা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। এ ছাড়া উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোকে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন : নাইটক্লাবে গোলাগুলি, নিহত ৮
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। এটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। বিস্ফোরণের পর ধোঁয়াচ্ছন্ন হয় চারপাশ। তিনি আরও জানান, তার জ্ঞান ফিরলে মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়তে দেখেন।
সিভিল সেক্রেটারিয়েট অ্যাসোসিয়েশন পেশোয়ারের সভাপতি তাসাভুর ইকবাল বলেন, আমি নিয়মিত ওই মসজিদে নামাজ পড়ি পুলিশ লাইন্স এলাকার নিরাপত্তা সবসময়ই কড়া থাকে। এমনকি পরিচয় দেওয়া ও দেহ তল্লাশি ছাড়া কেউই ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না।
ইকবাল আরও বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি একটি বড় মসজিদ, যেখানে একই সময়ে চারশ-পাঁচশ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। বিস্ফোরণের পর ভবনটি ধসে পড়ে।’
আরও পড়ুন : পেরুতে বাস খাদে, নিহত ২৪
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, একটি মসজিদের ভেতরে আত্মঘাতী বোমা হামলা প্রমাণ করে, ইসলামের সঙ্গে হামলায় জড়িতদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, এক টুইট বার্তায় এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সূত্র: জিও নিউজ, ডন।
সান নিউজ/এইচএন