আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘গুস্তাভ’ নামের কুমিরটির বসবাস বুরুন্ডির রুসিজি নদীতে। শরীরের আকার দৈত্যের মত। পেটের খিদেও তার দৈত্যের মতো। অনেকের ধারনা, ৩০০ মানুষকে আস্ত গিলে খেয়েছে এটি। তার পর পালিয়ে বেঁচেও আছে অনায়াসে। আজ পর্যন্ত কেউ ধরতে পারেনি গুস্তাভ নামে সেই কুমিরকে। এটির চামড়া এত পুরু যে অনেকে মনে করেন, একে-৪৭’এর গুলি, রকেট লঞ্চারও কিছু করতে পারবে না গুস্তাভের।
আরও পড়ুন: ৩৩ আসনে একাই লড়বেন ইমরান
বলা হয়, গুস্তাভ নাকি আফ্রিকার সবচাইতে বড় সরীসৃপ। এটি লম্বায় প্রায় ছ’মিটার। ওজন প্রায় এক টনের কাছাকাছি। কিছু গবেষকের দাবি, গুস্তাভের ওজন ২০০০ পাউন্ড। অর্থাৎ প্রায় ৯০৭ কেজি।
কুমির বিশেষজ্ঞ মার্ক গানসুয়ানা জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সাল নাগাদ প্রথম গুস্তাভের উৎপাত ধরা পড়ে। বেশ কিছু মানুষকে খেয়ে ফেলে এটি। এরপর ক্রমেই বাড়তে থাকে উৎপাত। কুমির বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিস ফায়ে ২০০১ সালে তার নাম রাখেন ‘গুস্তাভ’।
নথি বলছে, ষাটের দশকে বেলজিয়ামের দাসত্ব থেকে দেশকে মুক্ত করতে লড়ছেন বুরুন্ডির রাজা চতুর্থ মোয়ামবাৎসা। তাঁরই এক হুতু সৈন্য নদীর জলে স্নান করছিল। সেই প্রথম দেখে গুস্তাভকে। একটা বিরাট কুমির নদীর শ্যাওলা থেকে বিশ্রী শরীর তুলে, থ্যাপথ্যাপ করে এগিয়ে এল। খপ করে গিলে ফেলে একটা আস্ত জলহস্তী।
সেসময় স্থানীয়রা বলেছিলেন, হতেও পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি একটু বেশি মিঠে হয়ে গেলে এই এলাকায় নীলনদের কুমিরগুলো চলে আসে। মাছে পেট না ভরলে লাগোয়া জঙ্গলের কালো হরিণগুলোকে ধরে খেয়ে ফেলে।
এছাড়া জানা যায় বুরুন্ডির টাঙ্গানিকা হ্রদের ধারে ছোট্ট একটি নদী দ্বীপে ঘাপটি মেরে বসে থাকে গুস্তাভ। সময়-সুযোগ পেলেই ধরে শিকার। মাঝেমধ্যে রুজিজি নদীতে সাঁতার দেয়। তার জ্বালায় অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বিস্ফোরণে নিহত ২৮
অনেক বছর ধরে প্যাট্রিস পর্যবেক্ষণ করেছিলেন গুস্তাভকে। তিনি জানিয়েছেন, টাঙ্গানিকার বাকি কুমিররা মাছ, ছাগল, বাছুরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী খেয়ে পেট ভরায়। গুস্তাভ ওসবের ধার ধারে না। তার নিশানা মানুষ। এছাড়া কিছু কুমির বিশেষজ্ঞদের মতে, পশু বা মাছ নয়, শুধুই মানুষ খায় বলে গুস্তাভের ওজন অন্য কুমিরের থেকে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রুমঙ্গ ও মিনাগো এলাকায় ঘোরাঘুরি করে সে। নদীর তীরঘেঁষে সাঁতার দেওয়ার সময় গিলে ফেলে মৎস্যজীবী ও নদীতে গোসল করতে আসা লোকজনকে। প্যাট্রিসের দাবি, ওই এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় কয়েক দিনের মধ্যে এটি ১০-১৫ জনকে খেয়ে ফেলে।
ফায়ে জানান, সবসময় গোটা শিকার খেয়ে ফেলে না গুস্তাভ। কিছু অংশ ফেলে রাখে নদীতে। গ্রামবাসীর দাবি, খিদের জন্য শিকার ধরে না সে। আসলে মজা পায়। তাই মানুষ ধরে খায়। পেটে জায়গা থাকে না বলে কিছু অংশ মুখ দিয়ে উগরে দেয়।
আরও পড়ুন: জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গুলি, নিহত ৮
যদিও সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ গানসুয়ানা এ দাবি মানেননি। তার মতে, কুমির কখনই মজার জন্য মানুষকে গিলে ফেলে না। আসলে কুমির খুব বেশি খেতে পারে না। প্রয়োজনের বেশি পরিমাণ খাবার সে উগরে দেয়।
বহুবার চেষ্ট করা হয়েছে গুস্তাভকে ধরার । শিকারির দল হাল ছেড়ে দিয়েছেন। একবার তাকে ধরা নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়েছিল। সেবারও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েনি গুস্তাভ।
বিখ্যাত সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিস ফে নব্বইয়ের শেষাশেষি, নীলনদের এই মানুষখেকোকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্যাট্রিস বলেছিলেন, এই কুমিরের চামড়া এত মোটা যে ও বুলেটপ্রুফ। তিনি চিন্তা করেছিলেন, এটিকে জ্যান্ত ধরবেন। তাতে খুলে যেতে পারে জীব-বৈচিত্রের নতুন এক অধ্যায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসছে গঙ্গা বিলাস
প্যাট্রিস এক দল বন্যপ্রাণী কর্মীদের নিয়ে ২০০০ সাল থেকে শুরু করে দু-তিন বছর ধরে প্রচুর পড়াশোনা ও পরিশ্রম করে, গুস্তাভকে পাকড়াও করার একটা পরিকল্পনা করেন। অনেক কষ্টে গুস্তাভের এলাকায় পৌঁছনোর ছাড়পত্র জোগাড় করেন তিনি। প্রায় তিরিশ ফুট লম্বা খাঁচা বানিয়ে তাতে লাগান একটা ক্যামেরা। টানা দু’মাস ধরে বহু টোপ ব্যবহার করেন। এমনো শোনা যায় গুস্তাভের প্রিয় খাদ্য, জীবন্তমানুষ ও পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু আসেনি সে। শেষে মিশনে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তারা।
সান নিউজ/জেএইচ/এসআই