সান নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার ইমরান খান। তিনি ছিলেন দুর্দান্ত স্টাইলিশ, সুদর্শন ও তুমুল জনপ্রিয় ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন: তৃতীয় বিয়ে করলেন রেহাম খান
ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলা হয় তাকে। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বে তিনি চিরস্থায়ী আসন দখল করে আছেন অবিশ্বাস্য নেতৃত্ব গুণের স্বাক্ষর রেখে পাকিস্তানকে প্রথম ও একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়ে।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর আগে সর্বশেষ বৈঠকের স্মৃতি ভাগ করে নেন তিনি।
আরও পড়ুন: আল-আকসায় সংঘাতের আশঙ্কা
সেখানে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধান এই বিরোধী নেতা বলেন, ‘(বৈঠকে) জেনারেল বাজওয়া আমাকে প্লেবয় বলেছিলেন। আমি তার জবাবে বলেছিলাম, হ্যাঁ, আমি প্লেবয় ছিলাম।’
‘বাজওয়া হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি একই সঙ্গে আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছেন, আবার একই সঙ্গে সহানুভূতিও প্রদর্শন করেছেন।’
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হলেও ক্ষমতায় যেতে তাকে পূর্বসূরী রাজনীতিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ
কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং তার জেরেই চলতি বছর ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় এমপিদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান; ক্ষমতায় আসীন হয় সাবেক বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।
পিটিআই সরকারের আমলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে থাকা বাজওয়া অবসরে গেছেন গত ২৯ নভেম্বর। মঙ্গলবারের মতবিনিময় সভায় জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘তিনি আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতির বিরোধী ছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানে (সেনাবাহিনী) তার প্রভাব ছিল ব্যাপক, আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কখনও গড়ে ওঠেনি।’
আরও পড়ুন: সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী ভেনেজুয়েলা
প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানোর পর থেকে আর পার্লামেন্ট ভবনে যাননি ইমরান খান। সভায় এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা আর পার্লামেন্টে গিয়ে কি করব? সেখানে গিয়ে কোনো লাভ নেই।’
‘এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কারণ একটি স্বচ্ছ নির্বাচনই পারে দেশে একটি টেকসই সরকার গঠন করতে।’
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি এবং তার ছেলে ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়ালি ভুট্টোরও সমালোচন করেছেন ইমরান খান।
আরও পড়ুন: দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, নিহত ৪
তিনি বলেন, ‘আসিফ জারদারির রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ক ছেলের দায়িত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া শুধু বোকামিই নয়, বরং একটি অপরাধমূলক কাজ।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন ইমরান খান। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগানে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও দুটিতেই হেরে যান। তবুও থেমে যান নি তিনি। ২০০২ সালে নির্বাচনে জয়ী হন ইমরান খান।
২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশারফ তৎকালীন সেনা প্রধানের পদে থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছিলেন। ইমরান খান ওই নির্বাচনের বিরোধিতা করে ওই বছরের ২ অক্টোবর ৮৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে পদত্যাগ করেন। সে বারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশারফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করে। ইমরান খানকে গৃহবন্দী করা হয়। ওইসময় তিনি কিছুদিন হাজতবাসও করার পর মুক্তি পান।
২০১৩ সালে পাকিস্তানের ১০তম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আসন জেতে। আর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের ১১ তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তার দল আসন সংখ্যার বিচারে সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়। তিনি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০২২ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধিরা। যেখানে ১৭৪ ভোটে পরাজিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হন। ৩ নভেম্বর ২০২২ সাল বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ইমরান খান।
সান নিউজ/এনকে