আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনে জিরো কোভিড নীতির প্রতিবাদে রাজধানী বেইজিংসহ বড় বড় শহরগুলোতে শত শত লোক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এসময় তারা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পদত্যাগ দাবি করে শ্লোগান দেয়।
আরও পড়ুন : ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি
রোববার (২৭ নভেম্বর) ব্যতিক্রমী এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে দেশটির সাধারণ জনগণ।
করোনা সংক্রমণ কমাতে চীনা কর্তৃপক্ষের নেয়া কঠোর নীতি জনগণের মনে হতাশা তৈরি করেছে। তারা লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ও গণহারে করোনা পরীক্ষা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিহত হন। কঠোর লকডাউনের কারণে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে বলে জনগণ অভিযোগ করে।
আরও পড়ুন : ক্যামেরুনে ভূমিধসে নিহত ১৪
তবে কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে রোববার (২৬ নভেম্বর) রাতে কমপক্ষে চার শ’ লোক রাজধানী বেইজিংয়ের একটি নদীর তীরে কয়েক ঘণ্টার জন্যে জড়ো হয়। তারা জাতীয় সংগীত গায়, শ্লোগান দেয় এবং বক্তাদের কথা শোনে।
এ সময় নদীর অন্যপাশে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের দাবি শোনার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর বিক্ষোভকারীরা স্থান ত্যাগ করে।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহত ১
অপরদিকে চীনের বৃহত্তম নগরী সাংহাইয়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উলুমুকি সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টাকালে উভয়পক্ষে এ সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা রাতে জড়ো হয়ে শ্লোগান দেয়। এমনকি তারা তার পদত্যাগ দাবি করে।
রোববার সকালে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। কিন্তু বিকেলে তারা আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। এ সময়ে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে এবং কিছু লোককে আটক করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন : বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাব
এদিকে চীনে প্রথম যে শহরে করোনা দেখা দিয়েছে সেই উহান শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া গুয়াংঝু ও চেংডুতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
এমনকি বেইজিংয়ের অভিজাত সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ’ ছাত্রও লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে।
চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতভর বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্রাউডসোর্স করা তালিকায় দেখা গেছে, ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
আরও পড়ুন : মারা গেলেন বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রসঙ্গত, চীনে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কিংবা শ্লোগান দেয়ার ঘটনা বলতে গেলে বিরল। দেশটির আইন অনুযায়ী সরকার ও প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সমালোচনাকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
করোনী নীতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সত্ত্বেও শি জিন পিং সম্প্রতি জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে না আসার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে কঠোর লকডাউন দিয়েও চীনে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোববার দেশটিতে ৩৯ হাজার ৫০৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন : খেরসন অঞ্চলে রুশ হামলায় নিহত ৩২
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে সংস্থাটি।
সান নিউজ/এইচএন