আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
আরও পড়ুন : মাহাথিরের পরাজয়, জামানত বাজেয়াপ্ত
দেশটির রাজপ্রাসাদ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সান ডেইলি।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার সান ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় আনোয়ার শপথ নেবেন। এই শপথ বাক্য পাঠ করাবেন দেশটির রাজা আল–সুলতান আবদুল্লাহ।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে মালয়ের শাসকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় দেশটির রাজা মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ রক্ষায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন : যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাশিয়া
শনিবার (১৯ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট ৮২টি আসনে জয় পায়। অপরদিকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) পায় ৭৩ আসন।
মালয়েশিয়ায় কোনো দলই ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেখাতে পারেনি। দেশটিতে সরকার গঠনে ১১২ আসন নিশ্চিত করতে হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের উত্তরসূরী হওয়ার কথা ছিল তারই।
কিন্তু ১৯৯৮ সালে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন মাহাথির। তাকে রাজনীতিতেও নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত।
আরও পড়ুন : এবার নিয়োগ দেবে টুইটার
২০০৮ সালে উচ্চ আদালতে আপিল করে নির্দোষ হিসেবে মুক্তিলাভ করেন আনোয়ার। রাজনীতি করার অধিকারও ফিরে পান তিনি। আপিলে প্রমাণিত হয়— তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর এতদিন পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
শনিবার মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে ভোট দিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি আরও বলেন, তার নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্টে সংখ্যারিষ্ঠতা অর্জন ও তার ভিত্তিতে সরকার গঠনের লক্ষ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
আরও পড়ুন : ওয়ালমার্ট স্টোরে বন্দুক হামলায় নিহত ১০
তবে কোনো কারণে যদি তা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অন্যান্যদের সঙ্গে মিলেমিশে সরকার গঠনে তার আপত্তি নেই।
এর আগে মালয়েশিয়ার স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও রাজনীতি বিশ্লেষক সংস্থা মার্দেকা সেন্টারের বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে জানান, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত তিন রাজনীতিকের মধ্যে— আনোয়ার ইব্রাহিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকব।
এদের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন জোট সংস্কারপন্থী পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনের ৮২টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, মহিদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের পাওয়ার সম্ভবাবনা রয়েছে ৪৩টি আসন, আর ইসমাইল সাবরি ইয়াকবের নেতৃত্বাধীন জোট ৪৫টি ভোট পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : দলের এমপিদের বিদ্রোহের মুখে ঋষি
মার্দেকা সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৩৩ শতাংশ, এবং তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মুহিদ্দিন ও ইসমাইলের এই পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যথাক্রমে ২৬ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ।
মালয়েশিয়া :
মালয়েশিয়া বা মালয় ১৩টি রাজ্য এবং তিনটি ঐক্যবদ্ধ প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। এর মোট আয়তন ৩,২৯,৮৪৫ বর্গকিমি। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং পুত্রজায়া হল ফেডারেল সরকারের রাজধানী।
আরও পড়ুন : তুরস্ক ও মেক্সিকোতে শক্তিশালী ভূমিকম্প
দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত, মালয়েশিয়া উপদ্বীপ এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার স্থল সীমান্তে রয়েছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, এবং ব্রুনাই এবং সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন এর সাথে। মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়নের অধিক।
সরকার ও রাজনীতি :
মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়। রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ।
মালয়েশিয়ার সরকার ও ১১টি অঙ্গরাজ্য সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। সরকার এবং আইনসভার দুই কক্ষের (দেওয়ান নেগারা ও দেওয়ান রাকিয়াত) উপর যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত।
আরও পড়ুন : জঙ্গি শামীমা পাচার, নেপথ্যে যৌনতা
দেশটির বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ অপেক্ষা স্বাধীন, তবে নির্বাহী বিভাগ বিচারক নিয়োগদানের মাধ্যমে বিচার বিভাগের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
প্রশাসনিক অঞ্চল :
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর। দেশটির ৩ টি ফেডারেল টেরিটরি ও ১৩টি রাজ্য রয়েছে।
৩ টি ফেডারেল টেরিটরি হচ্ছে : কুয়ালালামপুর, লাবুয়ান এবং পুত্রাজায়া।
১৩টি রাজ্য হলো : পেনাং, পেরাক, সেলাঙ্গর, জোহর, মালাক্কা, সাবাহ, কেদাহ, তেরেঙ্গানু, সারাওয়াক, পেহাং, কেলান্তান, নেগেরি সেম্বিজান এবং পার্লিস।
সান নিউজ/এইচএন