সান নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার নতুন করে মিসাইল হামলার কারণে এক কোটির বেশি ইউক্রেনীয় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হামলায় এ পর্যন্ত ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত রয়েছে রাশিয়ার মিসাইল হামলা। বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক ভাষণে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি’। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ছয়টি ক্রুজ মিসাইল ও পাঁচটি ড্রোন ভূ-পাতিত করেছে।
আরও পড়ুন: গাজায় শরণার্থী শিবিরে আগুন, নিহত ২১
বৃহস্পতিবার, রাশিয়া নতুন করে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ ইউক্রেনের। বিদ্যুৎ অবকাঠামো, বেসামরিক ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় এসব হামলা চালানো হয় বলে দাবি কিয়েভ সংশ্লিষ্টদের।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়ার কাছে ভিলনিয়ানস্কে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে সাত জন মারা যান। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্বে একটি গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র ও দিনিপ্রোর একটি ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা সবশেষ হামলার টার্গেটে ছিল।
বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানী কিয়েভ, পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভিনিৎসিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমের ওদেসা বন্দর ও উত্তর-পূর্বের সুমির বাসিন্দারা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে কমেছে মৃত্যু
ইউক্রেনের আকাশ রক্ষায় মিত্রদের আরও সহযোগিতার আহ্বান জানান জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে, মস্কো কিয়েভকে আলোচনায় ‘অনীহা’ বলে অভিযোগ এনে এ হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে একটি যেটি জাপোরিঝিয়ার ঠিক উত্তরে, দিনিপ্রো, সেখানে ব্যাপক হামলা হয়েছে। সেখানকার একটি কারখানাও ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, শহরে গোলাবর্ষণের কারণে এক কিশোরসহ ২৩ জন আহত হয়েছেন।
তবে প্রকৃতপক্ষে কতজন হতাহত হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি বিবিসি। এসব হামলার কারণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেছেন, রাশিয়া শান্তি চায় না।
আরও পড়ুন: ট্রুডোর ওপর ক্ষেপলেন শি জিনপিং!
ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর যে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল দেশটি সেই খেরসন আবার তাদের দখলে গেছে সম্প্রতি। তবে এখনও আরও কয়েকটি অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও যুদ্ধে জয়ী হতে মরিয়া ইউক্রেনের জেলেনস্কির সরকার। ফলে দেশ দুটির মধ্যে লড়াই আরও তীব্র হচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গোটাবিশ্ব অর্থনৈতিক গোলযোগের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেট বিভাগের ৩ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির চেহারা। নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি।
৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সম্প্রতি খারকিভে পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে ইউক্রেনের সেনারা।
সান নিউজ/এনকে