আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ু দূষণের চরম মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সব প্রাথমিক স্কুল শনিবার (৫ নভেম্বর) থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) শিশুদের বাড়িতে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
রাজ্যের বাতাস শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত হলে তবেই খুলবে প্রাথমিক স্কুলগুলো। এ ছাড়া মাধ্যমিক স্কুল চালু থাকলেও শিক্ষার্থীদের স্কুলের মুক্তাঙ্গনে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি প্রশাসন।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপাতত উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলোবন্ধ করা হচ্ছে না। তবে বন্ধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা যেন স্কুলের বাইরে মুক্তাঙ্গনে সময় না কাটায় সেদিক লক্ষ্য রাখতে হবে।
আরও পড়ুন : আবারও ক্ষমতায় নেতানিয়াহু
পাশাপাশি দূষণের কথা মাথায় রেখে দিল্লির রাজপথে জোড়-বিজোড় নিয়মও নতুন করে চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দিল্লি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর খামারের আগুনের ধোঁয়া এবং যানবাহন নির্গমনের ফলে দিল্লির বায়ুর গুণমান সূচক বা একিউআই ৪২৬-এ দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়া রাজধানীতে দূষণের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। ৪০১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে বায়ুর গুণমান সূচককে গুরুতর হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। সেই হিসেবে দিল্লির বাতাসের মান এখন মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন : ইমরান খানের ওপর হামলা অগ্রহণযোগ্য
বায়ুর গুণমান খারাপ হওয়ার প্রেক্ষিতে রাজধানীতে চার স্তরীয় ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘দ্য কমিশন অব এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট’।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দিল্লি-এনসিআর-এ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে পুরনো ইঞ্জিনের ডিজেল গাড়ির ব্যবহার। এছাড়া বৈদ্যুতিক ও সিএনজি চালিত ট্রাক ছাড়া অন্য ট্রাকের রাজ্যটিতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানী দিল্লিতে ২ হাজার ৭৫৫টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এছাড়া উচ্চ প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৯৩৯টি, মাধ্যমিক স্কুল ৩৭৭টি এবং ১ হাজার ৬৮৪টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। শনিবার অর্থাৎ ৫ নভেম্বর থেকে বন্ধ হচ্ছে প্রাথমিক স্কুলগুলো।
আরও পড়ুন : ইমরান খানের অবস্থা স্থিতিশীল
দিল্লি বা দিল্লী হচ্ছে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে দিল্লি যমুনা-গঙ্গা নদী উপত্যকার উচ্চ দোয়াব ও পাঞ্জাব অঞ্চলের অংশ।
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির পূর্ব সীমায় উত্তরপ্রদেশ রাজ্য এবং অপর তিন সীমায় হরিয়ানা রাজ্য অবস্থিত।
দিল্লির আয়তন ১,৪৮৪ বর্গকিলোমিটার (৫৭৩ মা২) এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লক্ষ। এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর এবং দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল মহানগর অঞ্চল। এটি বিশ্বের ভারতের ৩য় বৃহত্তম শহরাঞ্চলও বটে।
দিল্লির নগরাঞ্চলীয় প্রসার এতটাই বেশি যে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির শহরও এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের হিসেব অনুসারে, বৃহত্তর দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ। মুম্বই শহরের পরেই দিল্লিতে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক সংখ্যায় কোটিপতি ও লক্ষপতিরা বসবাস করেন।
আরও পড়ুন : ইমরান খানকে বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন যুবক
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে দিল্লি নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি জনবসতি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে। ইতিহাসের অধিকাংশ সময় দিল্লি ছিল বিভিন্ন রাজ্য ও সাম্রাজ্যের রাজধানী।
এই শহরটি বহুবার শত্রু কর্তৃক অধিকৃত, লুণ্ঠিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। এই ঘটনাগুলি মূলত ঘটেছিল মধ্যযুগে। আধুনিক দিল্লি একটি মহানগর অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত একাধিক শহরের একটি নগরপুঞ্জ।
দিল্লি ও তার সংশ্লিষ্ট নগরাঞ্চলটিকে ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৬৯তম সংশোধনী বলে জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : ইমরান খান গুলিবিদ্ধ, নিহত ২
জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দিল্লীর প্রতিবেশী শহরগুলি - ফরিদাবাদ, গুরগাঁও, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, নেহারপার (বৃহত্তর ফরিদাবাদ), বৃহত্তর নয়ডা, বাহাদুরগড়, সোনাপত, পানিপত, কারনাল, রোহটাক, ভিওয়ানি, রেওয়ারি, বাঘপত, মীরাট, মুজফফরনগর, আলোয়ার, ভরতপুর ও নিকটবর্তী শহরগুলি।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রশাসন ভারতের রাজ্যগুলির অনুরূপ। দিল্লির নিজস্ব বিধানসভা, হাইকোর্ট ও মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী মন্ত্রিপরিষদ রয়েছে।
নতুন দিল্লির প্রশাসনিক দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত সরকার ও স্থানীয় দিল্লি সরকারের হাতে যুগ্মভাবে ন্যস্ত। নতুন দিল্লিই দিল্লির রাজধানী।
সান নিউজ/এইচএন