ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার (ভিসা) হরণে ফের যাতে কেউ ‘বিশেষ নির্বাহী আদেশ’ জারি করতে না পারেন সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাশ হয়েছে।
এই বিলের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং।
‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ বিলটি বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ২৩৩-১৮৩ ভোটে পাশ হয়। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষেও বিলটি পাশ করার জন্য সেনেট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এটি সেনেটেও পাশ হলে পাঠানো হবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য। তবে তা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে পুনরায় দুই তৃতীয়াংশ ভোটে বিলটি পাশ করতে হবে কংগ্রেসকে। তাহলেই ট্রাম্পের ভেটো অকার্যকর হয়ে বিলটি আইনে পরিণত হতে পারবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, চাদ, উত্তর কোরিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান, মিয়ানমার ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। সেই আদেশের বাস্তবায়ন ঝুলে রয়েছে আদালতের নির্দেশে।
আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হতে পারলে ফের যদি আরও বেশি সংখ্যক মুসলিম অধ্যুষিত দেশসহ ট্রাম্পের ‘অপছন্দের’ কিছু দেশের নাগরিকদের ভিসা নিষিদ্ধের আদেশ জারি করেন, সেই শঙ্কা থেকেই এই বিল পাশ করা হয়েছে।
প্রতিনিধি পরিষদের সব ডেমোক্রেট সদস্যদের ভোটে বিলটি পাশের পর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গ্রেস মেং বলেন, “মুসলমানদের নিষিদ্ধ করে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির পর থেকেই আমি আন্দোলনকারীদের পক্ষে রয়েছি। আমি কংগ্রেসে দাবি উঠিয়েছিলাম, ওই বিধি কার্যকর করার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বাতিলের জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ পাশ হওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “মুসলমানরা হল কঠোর পরিশ্রমী মানুষ, বিশেষ করে কুইন্সে বসবাসরতরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে অপরিসীম ভূমিকা পালন করছেন। এই বরোকে সমৃদ্ধশালী করতে তাদের অবদানের পরিক্রমা জাতীয় উন্নয়নকেও ত্বরাণ্বিত করছে। এ অবস্থায় আমাদের সকলকে ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
“কারণ এমন ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব কোনোভাবেই সুন্দর মনের প্রকাশ ঘটায় না। এমন নিষ্ঠুরতাকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানও প্রশ্রয় দেয় না। আমি সেনেটের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ বিলটি পাশের জন্যে।”
প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাশ হওয়ায় সন্তোষ জানিয়েছে মুসলিম বার অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইয়র্ক। বিলটি উত্থাপনের জন্য গ্রেস মেংকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
সাউথ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনও গ্রেস মেংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছে, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের একটি পদক্ষেপও আমেরিকার নীতি-নৈতিকতার পরিপূরক হচ্ছে না। সংবিধানে সকল ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠী-বর্ণের মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা থাকলেও ট্রাম্প তা মানতে নারাজ।”