সান নিউজ ডেস্ক: ইরানের পরমাণু চুক্তি স্থবির হয়ে পড়া ও ইউক্রেন আগ্রাসনে মস্কোর নতুন সামরিক সংহতি ঘোষণা বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের সরবরাহকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: নেপালে ভূমিধসে নিহত ১৭
ফলে এশিয়ার ক্রেতাদের জন্য শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জ্বালানি তেলের দাম ফের বাড়ল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ১৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি হয়েছে ৯০ দশমিক ৬২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রেরও ভুল আছে
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআিই) দাম ব্যারেলপ্রতি ২২ সেন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ৭১ ডলারে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার তদন্ত বন্ধ করার বিষয়ে তেহরানের এক গুয়েমির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের বলেন, ইরান তার অবস্থান পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না এখন। এই মন্তব্যের জেরে ইরানের সক্রিয় হওয়ার তৎপরতা বাড়েনি। বলা যায় এই চুক্তির ফলাফল না আসার অর্থ, আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানের তেলের প্রবেশ আপাতত বন্ধই থাকছে।
আরও পড়ুন: মহামারি কাটিয়ে চাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্র !
এদিকে, মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন করে সেনা নামানোর ঘোষণায় তেলের বাজারে আরেক ধরনের সরবরাহ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণভোট। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে এই গণভোট। বিষয়টি তীব্র নিন্দা করছে পশ্চিমারা। ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক সব পণ্যের বাজারেও।
অপরদিকে, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক, নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে বুধবার মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ টানা তৃতীয়বারের মতো মূল সুদের হার তিন-চতুর্থাংশ বা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে তিন থেকে তিন দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত করেছে। এটি দেশটিতে ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। ফলে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: মহামারি কাটিয়ে চাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্র !
এ ছাড়া শীতকালে জ্বালানি সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। জ্বালানি সরবরাহে উদ্বেগের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীনে করোনা মহামারির লকডাউনের কারণে জ্বালানি চাহিদা কমে যাওয়ার উদ্বেগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিএনপি
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির চেহারা। নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি।
৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সম্প্রতি খারকিভে পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে ইউক্রেনের সেনারা। ইউক্রেনের দাবি, ক্রেমলিনের সেনারা পিছু হটছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেন। দেশটির উত্তর-পূর্বে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বেড়াজালকে ভেঙে ফেলেছে তারা।
সান নিউজ/এনকে