আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পুলিশ হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর হিজাব এবং নৈতিকতা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ইরানে এ পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে। দেশটিতে অন্তত ১৫টি শহরে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
আরও পড়ুন : যুদ্ধ অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিক্ষোভকারীদের পুলিশকে ধাওয়া করা, গুলির শব্দ এবং মেয়েদের হিজাবে আগুন লাগানো- ইত্যাদি দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা গেছে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এই বিক্ষোভের টানা পঞ্চম দিনে নারীরা সারি শহরে আগুন জ্বালিয়ে উপস্থিত জনতাসহ উল্লাস করেন।
উরমিয়া, পিরানশাহর ও কেরমানশাহে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত তিন বিক্ষোভকারীর মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, নিহত ৯
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কেরমানশাহে দু'জন বেসামরিক নাগরিকের পাশাপাশি শিরাজে একজন পুলিশ সহকারীকে হত্যার অভিযোগ করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে আসা ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাশা আমিনি কোমায় ৩ দিন কাটানোর পর শুক্রবার হাসপাতালে মারা যান।
তেহরানে তার ভাইয়ের সাথে থাকার সময় ইরানের কঠোর নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।
আরও পড়ুন : ঢাকা আসছেন প্রণয় কুমার ভার্মা
তারা আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন।
পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই কোমায় চলে যান তিনি।
পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে আঘাত করার পর তার মাথা ফেটে যায় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ।
আরও পড়ুন : দেড় কেজি গাজা সহ গ্রেফতার ১
তবে পুলিশ তার সাথে দুর্ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে 'হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত' হয়েছিল। তবে তার পরিবার বলেছে, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন।
'মাশা আমিনির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলি অবশ্যই একটি স্বাধীন ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দ্বারা অবিলম্বে, নিরপেক্ষভাবে এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত এবং নিশ্চিত করতে হবে তার পরিবার সত্য ঘটনা জানতে পারবে এবং তারা ন্যায়বিচার পাবে,' - বলছেন নাশিফ।
তিনি উল্লেখ করেন যে জাতিসঙ্ঘ 'নারীদের প্রতি সহিংস আচরণের অসংখ্য এবং যাচাইকৃত ভিডিও' পেয়েছে কারণ নৈতিকতা পুলিশ সাম্প্রতিক মাসগুলিতে 'ঢিলেঢালা হিজাব' পরা মহিলাদের দমন করতে রাস্তায় টহল বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন : মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৪
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক সহযোগী আমিনির পরিবারের সাথে দেখা করেছেন এবং তাদের বলেছেন যে 'যেসব প্রতিষ্ঠান অধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে,' বলছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
নৈতিকতা পুলিশের সমালোচনা করে ইরানের সিনিয়র এমপি জালাল রশিদি কুচি প্রকাশ্যে বলেছেন, এ বাহিনী তৈরি একটি 'ভুল' কাজ, কারণ এটি ইরানের জন্য শুধু ক্ষতিই বয়ে এনেছে। সূত্র : বিবিসি।
সান নিউজ/এইচএন