সান নিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে ফের ঊর্ধ্বমুখী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পুনবর্হালের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসা এবং রুশ তেলে পশ্চিমাদের কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরের সময়সীমা এগিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ হামলা
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম এক শতাংশ বা ৯২ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৯৩ দশমিক ৭৬ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআিই) দাম ব্যারেলপ্রতি ০.৮ শতাংশ বা ৭১ সেন্ট বেড়ে হয়েছে ৮৭ দশমিক ৫০ ডলার।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস ঘোষণা দেয়, আগামী অক্টোবর মাস থেকে দৈনিক এক লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। তাদের এ সিদ্ধান্তের পরপরই বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। তবে সেটিকে লাগামহীন হতে দেয়নি চীনে লকডাউনের খবর। বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশটিতে করোনাজনিত লকডাউনের কারণে জ্বালানি চাহিদা কমে যাওয়ার উদ্বেগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এ অবস্থায় গত শনিবার ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি বলেছে, ইরান পরমাণু চুক্তি পুনবর্হাল সত্যিই চায় কি না সে বিষয়ে তাদের ‘গুরুতর সন্দেহ’ রয়েছে। এই চুক্তি না হওয়ার অর্থ, আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানি তেলের প্রবেশ সম্ভবত বন্ধই থাকছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে কমেছে প্রাণহানি
তবে বছরের শেষের দিকে তেলের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়ার তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে। পাশাপাশি, রুশ তেলের ওপর মূল্যসীমা আরোপ করতে চলেছে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি৭। এতে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহে ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
তেলের বাজারের জন্য আরেকটি খারাপ খবর হচ্ছে, গত দুই দশকের মধ্যে চীনে প্রথমবারের মতো তেল আমদানি কমে যেতে পারে। বেইজিংয়ের ‘জিরো কোভিড’ নীতির কারণে ছুটির দিনগুলোতেও মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, যাতে জ্বালানির চাহিদা কমছে।
তাছাড়া, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার আরও বাড়াতে প্রস্তুত। এটি হলে অনেক মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যমান আরও বাড়তে পারে এবং এর ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য তেল কেনা হয়ে উঠবে আরও ব্যয়বহুল।
আরও পড়ুন: অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ইমরান খান
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির চেহারা। নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি।
সান নিউজ/এনকে