ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বাংলাদেশে কোরবানির ঈদের সময় ভারত থেকে পাচার হওয়া গরু কোরবানি দেয়া উচিত না অনুচিত - এ ধরনের নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে গত সপ্তাহে দেওয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিবৃতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
মূলত ১৩ই জুলাই ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বিজিবির বিবৃতিতে।
ঐ খবরটিতে বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করা হয় যেখানে ভারত থেকে গরু পাচারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করে ভারতীয় বাহিনী বিএসএফ।
বিজিবি তাদের তাদের প্রতিবাদে বলেছে, মি. গুলেরিয়ার মন্তব্য ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদের জন্য 'অবমাননাকর' এবং মুসলিমদের 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল।
বিজিবি বলছে, এস এস গুলেরিয়া মন্তব্য করেছেন 'প্রাণীগুলোকে (গরু) পরম যত্নের সাথে লালন পালন করা হয়, কিন্তু কোরবানির ঈদের নামে উৎসর্গ করে জবাই করার অর্থ হল নির্যাতন করা' - যেই মন্তব্য ইসলাম ধর্মের জন্য অবমাননাকর।
এছাড়াও গরু পাচারে বিজিবির জড়িত থাকার অভিযোগ তোলার অর্থ হচ্ছে গরু চোরাচালান বন্ধে বিএসএফের নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার প্রচেষ্টা- বলছে বিজিবি।
বিজিবি উল্টো গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার পরোক্ষ অভিযোগ তুলছে বিএসএফের বিরুদ্ধেই। বিজিবি বলছে 'নদীপথে গরু পাচার বন্ধে বিএসএফের নিষ্ক্রিয়তা/তৎপরতার অভাব প্রশ্নের অবতারণা করে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সংবাদে উল্লেখ করা হয় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার বেড়েছে। এর প্রতিবাদে বিজিবি বলেছে আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য বাংলাদেশে পশুর মজুদ চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। তাই দেশীয় খামারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ভেতর থেকেই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা হবে, যে লক্ষ্যে বিজিবি দেশের সীমান্তে গবাদি পশু চোরাচালানরোধে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
কোরবানির ঈদের আগে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচার রুখতে বিএসএফের নেয়া নতুন কৌশলের অংশ হিসেবেই ৬ই জুলাই একটি বিবৃতি দেয় বিএসএফ।
তবে ওই বিবৃতিতে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে যে বিষয়টি, তা হল পাচার হওয়া গরু কোরবানি দেওয়া কতটা উচিত, তা নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্নটি।
বিএসএফের লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, "পাচারকারীরা গরুগুলির সঙ্গে পাশবিক আচরণ করে। পাচার করার আগে গরুর শরীরে মাদক মেশানো ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়। কোনও সময়ে লেজ কেটে দেওয়া হয়, যাতে গরুগুলি প্রাণপনে দৌড়তে পারে, তাদের অভুক্ত রাখা হয়। এইরকম যন্ত্রণা দিয়ে গরুগুলিকে সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় কয়েকশো কিলোমিটার পায়ে হাঁটিয়ে অথবা ট্রাকে গাদাগাদি করে। এইরকম যন্ত্রণা দেওয়ার পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ীই গরুগুলি আর কোরবানির উপযুক্ত থাকে না।"
তিনি বলেন, পশুবিজ্ঞান অনুযায়ী ওই ভাবে পাচার হওয়া গরু মানুষের খাওয়া উচিত নয়। মি. গুলেরিয়ার ব্যাখ্যা,"বাংলাদেশে যখন গরুগুলিকে পাচার করা হয় তখন কখনও তাদের চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধে, পা বেঁধে কলার ভেলায় বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় যেসব গরু বাংলাদেশে পৌঁছায়, সেগুলি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আদৌ মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়।"
বিএসএফের এই বিবৃতিটি প্রকাশিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরাও প্রতিবেশী দেশের ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে করা মন্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএফ বলে থাকে যে এই দুটি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বর্তমানে সর্বকালের সেরা সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও পাচারকারীদের সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে এর আগে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি।
কিন্তু বিএসএফের বিবৃতিতে গরু পাচারে বিজিবির পরোক্ষ সম্পৃক্ততা নিয়ে যা লেখা হয়েছিল, তাতে বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়ার অফিসাররাও কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।
বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বর্তমানে সুসম্পর্ক থাকলেও দুটো বাহিনীর এ ধরনের বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি বিরল এক ঘটনা।